বিমানকর্মীদের আন্দোলন-২৬ মার্চের মধ্যে পর্ষদ না ভাঙলে লাগাতার ধর্মঘট

বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন কর্মীরা। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে লাগাতার ধর্মঘট ও দেশের সব বিমানবন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই সময়সীমা বেঁধে দেন

‘বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদের’ নেতারা। একই সঙ্গে ২৫ মার্চ সকাল নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে এতে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) প্রতিও আহ্বান জানান তাঁরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বলাকা ভবনের নিচে গতকাল বেলা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মীরা। এতে পাইলট, প্রকৌশলী, কেবিন ক্রুসহ বিমানের বিভিন্ন শাখার সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। এ সময় কর্মীরা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এক বক্তা জামাল উদ্দিনের ‘স্বেচ্ছারিতার’ কথা বলতে গিয়ে ‘এই ভদ্রলোক’ বলার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীরা চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান এবং ‘ভদ্রলোক’ শব্দ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মশিকুর রহমান বলেন, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ পরিচালনা পর্ষদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মীদের রাস্তায় রেখে চেয়ারম্যান মঙ্গলবার রাতে সপরিবারে ওমরাহ হজ করতে গেছেন। কোনো ভদ্রলোক এটা করতে পারেন না। তিনি জামাল উদ্দিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বিশ্বের যেখানেই থাকুন, সেখান থেকে পদত্যাগ করুন। তার পরও কাবা শরিফ তোয়াফ করুন।’
বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে ৩ মার্চ। তারা পর্ষদের সবাইকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তিন সপ্তাহ ধরে চেয়ারম্যানসহ কোনো পর্ষদ সদস্য বিমানের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি।
কর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান পর্ষদ ‘কমিশন বাণিজ্যের’ কারণে নিজস্ব উড়োজাহাজ বসিয়ে রেখে ভাড়ার উড়োজাহাজ দিয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তাদের অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে গত তিন বছরে বিমানের এক হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই বছরে লোকসান তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে বিমান দেউলিয়া হয়ে যাবে। কর্মীরা বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে পর্ষদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতার সুনির্দিষ্ট ২১টি অভিযোগ করেছে।
ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মশিকুর রহমান বর্তমান পর্ষদ ভেঙে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন এবং দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করার দাবি জানান। তিনি বলেন, নতুন পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব ক্যাপ্টেন এস এম হেলাল বলেন, ‘আমাদের লড়াই সরকারের পক্ষে। কারণ, বিমানের শতভাগ মালিকানা সরকারের। আর এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছি।’
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন বাসিত মাহতাব, বিমান অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জহিরুল হক, প্রকৌশলীদের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, বিমান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহজাহান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.