পবিত্র কোরআনের আলো-মুহ্ছিনীন ও সালেহীন পয়গম্বরদের কয়েকজনের পরিচয় ও নামের বর্ণনা

৮২. আল্লাযীনা আমানূ ওয়া লামইয়ালবিছূ ঈমানাহুম বিযুলমিন উলায়িকা লাহুমুল আমনু ওয়া হুম্ মুহ্তাদূন।৮৩. ওয়া তিলকা হুজ্জাতুনা আ-তাইনা-হা ইব্রাহীমা আ'লা ক্বাওমিহী; নারফাউ' দারাজাতিম্ মান নাশা-উ ইন্না রাব্বাকা হাকীমুন আ'লীম।


৮৪. ওয়া ওয়াহাবনা লাহূ ইছহা-ক্বা ওয়া ইয়া'ক্বূবা; কুল্লান হাদাইনা ওয়া নূহান হাদাইনা মিন্ ক্বাবলু ওয়া মিন যুর্রিইয়্যাতিহী দাঊদা ওয়া ছুলাইমানা ওয়া আইয়ূ্যবা ওয়া ইঊছুফা ওয়া মূছা ওয়া হারূনা; ওয়া কাযালিকা নাজযিল মুহ্ছিনীন।
৮৫. ওয়া যাকারিয়্যা ওয়া ইয়াহ্ইয়া ওয়া ঈ'ছা- ওয়া ইলইয়াছা; কুল্লুম্ মিনাস্ সালিহীন।
৮৬. ওয়া ইছমাঈ'লা ওয়ালইয়াছাআ' ওয়া ইঊনুছা ওয়া লূত্বান; ওয়া কুল্লান ফাদ্দ্বালনা আ'লাল আ'-লামীন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৮২-৮৬]
অনুবাদ : ৮২. যারা ইমান এনেছে, অর্থাৎ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে এবং অত্যাচারে লিপ্ত হয়ে তাদের অঙ্গীকারকে কলুষিত করেনি, তারা শান্তি বা নিরাপত্তার অধিকারী এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।
৮৩. এটা ছিল আমার সেই পরম যুক্তি, যা আমি ইব্রাহিমকে তার জাতির ওপর দান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা করি, তাকেই মর্যাদার উচ্চ আসন দান করি। অবশ্যই আপনার প্রভু প্রজ্ঞাময় ও বিজ্ঞ।
৮৪. অতঃপর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাফ ও (তার পুত্র) ইয়াকুবকে। এদের সবাইকে আমি সঠিক পথের দিশা দিয়েছিলাম। এর আগে আমি নুহকেও হেদায়েতের পথ দেখিয়েছি। অতঃপর তার বংশে দাউদ, সোলায়মান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা এবং হারুনকেও হেদায়েত দান করেছি। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার প্রদান করে থাকি।
৮৫. জাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসের কথাও বলা যায়, এরা সবাই ছিল নেককারদের দলভুক্ত।
৮৬. (আমি আরো সৎ পথ দেখিয়েছিলাম) ইসমাঈল, ইয়াসা, ইউনুস এবং লুতকেও। এদের সবাইকে আমি সৃষ্টিকুলের ওপর বিশেষ মর্যাদা দান করেছিলাম।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে ইব্রাহীম (আ.) এবং তাঁরও আগের হজরত নুহ (আ.)-এর প্রসঙ্গ ধরে তাঁদের বংশের পয়গম্বরদের কয়েকজনের নাম ও পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের মুহ্ছিনীন অথবা সালেহীন বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা যে ন্যায়বান ও সৎকর্মশীল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর জন্ম হজরত নুহ (আ.)-এর বংশে বলেই প্রায় সর্বজনীনভাবে বিশ্বাস করা হয়। হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দুই পুত্র ছিলেন। হজরত ইসমাইল ও হজরত ইসহাক (আ.)। হজরত ইসহাকের পুত্র হজরত ইয়াকুব (আ.)। ৮৪ নম্বর আয়াতে ইসহাক ও ইয়াকুবের নাম একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত নুহ (আ.) যে তাঁদের পূর্বপুরুষ, সেই আভাসও এই আয়াতেই রয়েছে। ৮২ ও ৮৩ নম্বর আয়াতে সত্যিকার ইমানদারদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে। সত্যিকার ইমানদাররা কখনো অত্যাচার-অবিচারে লিপ্ত হন না এবং তাঁরা সুপথপ্রাপ্ত। হজরত ইব্রাহীম (আ.) হলেন তাঁদের সর্বোত্তম উদাহরণ। হজরত ইব্রাহীম (আ.) একত্ববাদের অন্যতম প্রাণপুরুষ। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অত্যাচারী ও মুশরিক জাতির বিরুদ্ধে একত্ববাদের অকাট্য যুক্তি তুলে ধরার যোগ্যতা দান করেছিলেন। হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টিজগতের উচ্চ আসনে সমাসীন করেছিলেন। তাঁকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল খলিলুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধু। তাঁর অত্যাচারী ও মুশরিক জাতি নিজেদের কর্মফলের কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তিনি পৃথিবীতে নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার ভিত্তি প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি তাঁর এক পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। অপর পুত্র ইসহাকের বংশধররা বনিইসরাইল নামে মানব সভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বিচরণ করার গৌরব অর্জন করেছেন। তাদের ঔদ্ধত্য, অবাধ্যতা, নির্বুদ্ধিতা_সবই আছে, এর পরও আল্লাহ তায়ালা সর্বাধিক নবী, রাসুল ও আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন এই বংশের ওপরই। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন স্তর ধরে ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.