যুক্তরাষ্ট্রকে আইএইএ থেকে বহিষ্কারের দাবি ইরানের

যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আণবিক অপরাধী’ (অ্যাটমিক ক্রিমিনাল) বলে আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পরমাণু শক্তিধর সব দেশকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে ইরান। ওয়াশিংটনে ৪৭ দেশের পরমাণু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন কয়েকের মাথায় গতকাল শনিবার তেহরানে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। খবর এএফপির।
কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একটি লিখিত বার্তা পড়ে শোনানো হয়। ওই বার্তায় খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যে আণবিক অপরাধ সংঘটিত করেছে। বিশ্বের এই একমাত্র আণবিক অপরাধী একের পর এক মিথ্যা বলে যাচ্ছে এবং নিজেকে পরমাণু অস্ত্রবিস্তারের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দেশটি এখন পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধের বিষয়ে কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেয়নি। খামেনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারকে তাঁরা ‘হারাম’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
পরমাণু ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বক্তব্য দিতে গিয়ে খামেনির চেয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন। ওই সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। তিনি বলেন, যারা ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে, যারা ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং যারা এ অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, তাদের আইএইএ থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তিনি বলেন, আইএইএর পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বর্জ্যে তৈরি ভয়াবহ অস্ত্র গত ইরাক যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, গতকাল শুরু হওয়া ওই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রমিন মেহমানপরাশ্ত বলেছেন, লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, ওমান, তুর্কমেনিস্তান, আর্মেনিয়া ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও তাতে যোগ দিচ্ছেন।
মেহমানপরাশ্ত বলেছেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন বিশেষ দূত জাতিসংঘ, আইএইএর প্রতিনিধিরা এবং ওআইসির প্রধান এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
তেহরান সম্মেলনে ইরানের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ৪৭ জাতির পরমাণু সম্মেলনের কড়া সমালোচনা করা হয়। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু অস্ত্রের মজুদ দখলে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এখন পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধের আহ্বান জানাচ্ছে।
ওয়াশিংটন সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চীনসহ জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের সদস্যদের পরমাণু ইস্যুতে ইরানের ওপর চতুর্থ দফায় অবরোধ আরোপ করতে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছেন।
তেহরান সম্মেলন সম্পর্কে শুক্রবার ইরানের পরমাণু-প্রধান আলি আকবার সালেহি বলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, বিস্তার রোধ এবং শান্তিপূর্ণ পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁরা এ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন, আগামী মাসে নিউইয়র্কে অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি বা নন-প্রলিফারেশন ট্রিটির (এনপিটি) যে পর্যালোচনামূলক সভা হবে, এ সম্মেলনে তাতে যোগদানের প্রাক্-প্রস্তুতিও নেওয়া হবে।
এদিকে, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির বিদেশ ভ্রমণে ‘অবরোধ আরোপ’ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জাপানের হিরোশিমায় গতকাল একটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সম্মেলনের আয়োজকেরা বলেছেন, শেষ মুহূর্তে খাতামি তাঁর জাপান সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেন। খাতামির সহযোগীরা বিবিসিকে বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে বাধা দেওয়ার কারণেই তিনি জাপানে যেতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.