কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক অভিসংশনের মুখোমুখি

আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক সৌমিত্র সেন এবার ভারতীয় সংসদে অভিশংসনের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিচারপতির বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে আগামী ৫ মের মধ্যে তাঁর বক্তব্য পেশের নির্দেশ দিয়েছে। এ কমিটি সৌমিত্র সেনের জবাব পাওয়ার পরই এ বছরের জুনের শেষের দিকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন রাজ্যসভায় পেশ করবে।
ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ওই বিচারকের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে রাজ্যসভার চেয়ারপারসন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস সুদর্শন রেড্ডি। এই কমিটির অন্য সদস্য দুজন হলেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মুকুল মুদগল এবং বিশিষ্ট জুরিস্ট ফালি এস নরিম্যান। এই তদন্ত কমিটি বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সৌমিত্র সেনের আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রমাণ পায়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
১৯৯০ সালে মামলাভুক্ত একটি সম্পত্তি বিক্রির জন্য আদালত থেকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়। সেই রিসিভার হিসেবে নিয়োজিত হন সৌমিত্র সেন। তখন তিনি আইনজীবী ছিলেন। এ সময়ই ওই সম্পত্তির বিক্রয়লব্ধ ২৪ লাখ রুপি বেআইনিভাবে জমা পড়ে সৌমিত্র সেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
সৌমিত্র সেন ২০০৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তাঁর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হলে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে ৫২ লাখ রুপি জমা দিতে বলা হয়। সৌমিত্র সেন তখন ৫২ লাখ রুপি জমা দেন। এরপর ফের অভিযোগ ওঠে, তিনি ২৫ লাখ লাখ রুপি অন্যএকটি অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে কোথাও বিনিয়োগ করেছেন। আর এ নিয়েই সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংসদে অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দাবি ওঠে তাঁকে অভিশংসন করার।
এরপরই রাজ্যসভার চেয়ারপারসন বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এদিকে সৌমিত্র সেনও এই কমিটির কাছে তাঁর বক্তব্য পেশ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।
এর আগে এ ব্যাপারে সৌমিত্র সেনের কাছ থেকে বক্তব্য শোনার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণণ ১৬ মার্চ সৌমিত্র সেনকে পদত্যাগ করার বা স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সৌমিত্র সেন জানিয়ে দেন, ওই দুটি প্রস্তাবে তিনি রাজি নন।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, হাইকোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি নিজ ক্ষমতাবলে ওই বিচারপতিকে অভিশংসন করতে পারেন; অথবা দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে ওই বিচারককে অভিশংসন করতে পারে ভারতের সংসদ।

No comments

Powered by Blogger.