থাইল্যান্ডে লাল শার্টের বিক্ষোভ ঠেকাতে রাজপথে হলুদ শার্টের সমাবেশ

থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের দমন করতে এবার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাজপথে নেমেছেন সরকারপন্থী হলুদ শার্ট পরা সমর্থকেরা। ব্যাংককের প্রধান বাণিজ্যিক শহর সিলমে যাতে লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীরা যেতে না পারেন, সে জন্য হলুদ শার্ট পরা সরকার-সমর্থকেরা রাজপথে জড়ো হতে শুরু করেছেন।
গতকাল রোববার তিন থেকে পাঁচ হাজার সরকারপন্থী হলুদ শার্ট পরা ব্যক্তি ব্যাংকক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাঁরা লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, লাল শার্ট বিক্ষোভকারীরা সিলমের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে তাঁদের ওই শহরে যাওয়া প্রতিহত করা হবে। হলুদ শার্ট পরা সমর্থক ও সেনাবাহিনীর এসব হুঁশিয়ারিতে লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীরা কিছুটা নরম হয়েছেন। সিলমে যাওয়া নিয়ে তাঁরা গতকাল বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অবশ্য এখনো জানানো হয়নি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, সহিংসতা এড়াতে তাঁরা শেষ পর্যন্ত ওই কর্মসূচি থেকে সরে আসতে পারেন।
থাইল্যান্ড এখন কার্যত লাল শার্ট ও হলুদ শার্ট—এ দুই অংশে বিভক্ত। লাল শার্টের লোকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থক। হলুদ শার্টের লোকজন প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজিভার সমর্থক। হলুদ শার্ট পরা সমর্থকেরা থাইল্যান্ডের এলিট বা প্রভাবশালী সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট। অন্যদিকে লাল শার্ট পরা সমর্থকেরা সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তাঁদের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন খুবই জনপ্রিয়।
হলুদ শার্ট পরা সমর্থকেরা মূলত ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির (পিএডি) সদস্য। লাল শার্ট পরা থাকসিনপন্থীদের রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা সিলমে যাওয়া ঠেকাতে রোববার তাঁরা সমাবেশ করেন।
বিভিন্ন প্রদেশ থেকে পিএডির প্রতিনিধিরা এখানে আসেন, তাঁরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের রূপরেখা নিয়ে কথাবার্তা বলেন। তিনি আরও জানান, গতকাল তাঁদের সমাবেশে তিন থেকে পাঁচ হাজার পিএডির সমর্থক অংশ নেন।
এই পিএডির সমর্থকেরা হলুদ শার্ট গায়ে দিয়ে ২০০৮ সালে ব্যাংকক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেন। তাঁদের আন্দোলনের ফলেই আদালতের বিতর্কিত রায়ে তখন থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতা হারান। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, লাল শার্ট সমর্থকদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগের জন্যই তাঁরা রাজপথে জড়ো হয়েছেন।
লাল শার্ট নেতারা নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায় নিয়ে গতকাল আলোচনা করেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকা সিলমে বিক্ষোভ মিছিল করা নিয়েও আলোচনা করেন।
এদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সহিংসতা এড়াতে তারা লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের সিলমে যেতে দেবে না। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সেনসার্ন কাকুমনার বলেছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে তাঁরা সিলমে যেতে না পারেন। এ জন্য পুলিশ ও সেনারা যৌথভাবে তাঁদের প্রতিরোধ করবে।
বিক্ষোভকারীরা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করা হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে হলে এটা ছাড়া কোনো পথ তাঁদের সামনে খোলা নেই।
লাল শার্ট পরা সমর্থকদের নেতা নাতাউত সাইকুয়ার বলেছেন, শনিবার তাঁদের ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী অভিজিতের রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেননি।

No comments

Powered by Blogger.