আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করে?-সড়কে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই

চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও শ্রমিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে তাঁরা ধর্মঘট স্থগিত করেছেন বটে, কিন্তু চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কী মাত্রায় বেড়ে গেলে ধর্মঘটের মতো চরম প্রতিবাদী অবস্থান নিতে বাসমালিক ও শ্রমিকেরা বাধ্য হয়েছিলেন, তা সহজেই বোঝা যায়।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, গাজীপুর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন, মহাখালী বাস মালিক সমিতিসহ যে ছয়টি সংগঠন ধর্মঘট শুরু করেছিল, তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কে সন্ত্রাসীরা বাসের চালক ও সহকারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে চলেছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধর করা হয়, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাসে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। বাসমালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে এসবের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ডাকাত, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং পুলিশ নানাভাবে তাঁদের হয়রানি করে থাকে।
সড়ক-মহাসড়কগুলোয় নিরাপত্তা বিধানের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু ঈদ বা বড় কোনো উপলক্ষে মহাসড়কগুলোয় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। এ কারণে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের খবর অহরহই পাওয়া যায়। এটা শুধু ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়কেই নয়, দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কেই ঘটে থাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির কারণে রাজধানীর বাজারে নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে যায়।
বাসমালিক ও শ্রমিকেরা এর আগে গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো জেলা প্রশাসনই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ধর্মঘট শুরু না করা পর্যন্ত যদি কোনো সমস্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চেতনা না জাগে, তবে তা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে বাসমালিক ও শ্রমিকেরা ধর্মঘট স্থগিত করেছেন মানেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, এটা মনে করা ঠিক হবে না। কর্তৃপক্ষ যদি চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারে, তাহলে তাঁরা আবারও ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবেন। কিন্তু শুধু সে কারণেই নয়, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের স্বাভাবিক দায়িত্বের অন্তর্গত। এ লক্ষ্যে কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপ নিতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.