ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা ত্যাগ করুন-উল্টোপথে মন্ত্রী-সাংসদ

সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলার অনেক কারণই রয়েছে। বড় কারণটি সম্ভবত যানবাহনের সংখ্যাধিক্যের বিপরীতে রাস্তাঘাটের স্বল্পতা। কিন্তু এর অনেক বেশিসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে এমন অনেক দেশ ও শহর আছে, যেখানে যানজট ও বিশৃঙ্খলা আমাদের মতো প্রকট নয়।


কারণ, ওই সব শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল, আমাদের ক্ষেত্রে যা উল্টো।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য প্রায়ই পুলিশকে দায়ী করা হয়। দায় যে তাদের নেই, এ কথা কেউ বলে না, কিন্তু এ কথাও সত্য যে আমাদের দেশে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরিবর্তে বরং তা ভাঙার প্রবণতাই বেশি। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের দেশে, বিশেষত ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি লোকসংখ্যার মহানগর ঢাকায় মানুষের সাধারণ প্রবণতাই যদি হয় রাস্তাঘাটে চলাফেরার সব নিয়মকানুন ভেঙে বা এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করা। ফলে কারোরই চলার গতি দ্রুত হতে পারে না; বরং সবাই সবাইকে ডিঙিয়ে, অতিক্রম করে আগে যাওয়ার ইঁদুরদৌড়ে নেমে এলে কারোরই আগে যাওয়া হয় না।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড নামের একটি সংস্থা আয়োজিত ‘পুলিশের জন্য নির্ধারিত বাজেট: বাস্তবতা ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা কম। মন্ত্রী, সাংসদসহ নামীদামি অনেকেই ট্রাফিক আইন ভেঙে উল্টোপথ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান।’ পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথায় নতুন তথ্য নেই, কিন্তু আছে পুলিশ বিভাগের অসহায়ত্বের প্রকাশ।
ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার পাশাপাশি তিনজন সাংসদও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপকমিশনারের অভিযোগের বিরোধিতা তাঁরা করেননি। একজন সাংসদ বরং উপকমিশনারের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পুলিশ বিভাগকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনাদের মানবিক হলে চলবে না, আইন বাস্তবায়নের যন্ত্র হতে হবে।’
পুলিশ সদস্যদের মানবিক হওয়াই বাঞ্ছনীয়। ক্ষমতাধর যাঁরা আইন ভাঙেন, তাঁদের মধ্যেই বরং এই উপলব্ধি জাগা উচিত যে, তাঁরাই যদি আইন ভাঙেন তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে?

No comments

Powered by Blogger.