কেবল সভা-সমাবেশ করলেই গণতন্ত্র সুসংহত হবে না by ড. আনোয়ার হোসেন

আমাদের গণতন্ত্র মাটিতে শক্ত শেকড় গেড়ে দাঁড়াতে পারেনি। এর জন্য প্রয়োজন ছিল ধারাবাহিকতা। আর এ জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- গণতন্ত্রকে অব্যাহতভাবে চর্চা করতে দেওয়া হয়নি। বারবার সেনাবাহিনীর একটি অংশ হস্তক্ষেপ করেছে।

সরকার উৎখাত করে সামরিক শাসন এনেছে। সামরিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। যে কারণে গণতান্ত্রিক ধারা হয়েছে ব্যাহত। ১৯৯০ সালের পর যে গণতন্ত্র এসেছে তাও ছিল অতি দুর্বল। পার্শ্ববর্তী ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে আমরা গণতন্ত্র চর্চার যে ধারাবাহিকতা দেখছি, তা এখানে অনুপস্থিত। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্মুখসমরের জায়গাটি হলো সংসদ। এই সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর বাগ্বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত হয়ে থাকে, সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনা দৃঢ় হয়। কিন্তু সেই সংসদই এখানে একরকম অকেজো হয়ে আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন সব কর্মসূচি আসছে, যেগুলো জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। স্কুল-কলেজে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আমাদের ঘাবড়ে গেলে চলবে না। এর থেকে মুক্ত হতে হবে। হয়তো সময় একটু লাগবে। আমাদের দেশে সুশীল সমাজের অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক। তারা নিজেদের একটি নিরাপদ জায়গায় রেখে শুধু সমালোচনা করেন। না, সেটা ঠিক নয়। তাদের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। আমরা ২০০৭ সালেও সুশীল সমাজের লোকদের দেখেছি। তাঁরা কেউ কেউ সেই অগণতান্ত্রিক সরকারের লেজুড়বৃত্তিতে নেমেছিলেন। এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর পরিচয়ে তাঁরা অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এভাবে নয়, সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো দেখতে হবে। তাঁদের সম্পৃক্ততায় দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা দৃঢ় হয়ে উঠবে।
আমি মনে করি, সংসদকে অর্থবহ করা দরকার। এটাই সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকবে, আন্দোলন থাকবে। জনগণের সঙ্গে ভাষা বিনিময়ের জন্য তারা মিছিল-মিটিং করবে, সভা-সমাবেশ করবে। কিন্তু সেটা রাস্তাসর্বস্ব হয়ে গেলে তাকে গণতন্ত্র বলা যায় না।
গ্রন্থনা : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.