সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে-সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আলোচনার জন্য সরকারের দ্বার খোলা আছে। শেষ দিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।’ তাঁর এই বক্তব্যে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে, যদি সরকার সত্যি সত্যি বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা চায়। যেকোনো রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে আলোচনার বিকল্প নেই।

কিন্তু বর্তমানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো পর্যায়েই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে না। আলোচনার অনুপস্থিতি ডেকে আনে সংঘাত, সংঘর্ষ, রাজপথে শক্তি প্রদর্শন, যা কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বৃহস্পতিবার দলের প্রতীকী গণ-অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি পরিহার করার কথা বলেছেন। এটি ইতিবাচক। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন এবং নির্বাচন কমিশন কীভাবে পুনর্গঠিত হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতার এই আগ্রহের প্রতি সম্মান জানিয়েও আমাদের বক্তব্য হলো, আলোচনার আগেই পূর্বশর্ত নয়। ‘দাবি আগে মানতে হবে, তারপর আলোচনা’—এই মনোভাব সমস্যার সমাধান করবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলোচনার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন। তার কী প্রয়োজন? সংঘাত, সংঘর্ষ এড়াতে এখনই দুই পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে। এর আগে সরকারি দলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে আবার সংবিধান সংশোধিত হতে পারে। সেটিও আলোচনার ভিত্তি হতে পারে। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থা ও অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে। এখন সেই অনাস্থা ও অবিশ্বাস দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।
সরকারি দল শুরু থেকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু কী নিয়ে আলোচনা হবে, সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট কিছু বলছে না। তাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের আগের পরিস্থিতি এখন নেই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। এখন আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসতে হবে।
বর্তমানে সংসদ অধিবেশন নেই। সে জন্য সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ বিরোধী দলকে নির্দিষ্ট প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনার আহ্বান জানাতে পারেন। চিঠি লিখতে পারেন। অতীতে রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই দলের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে বসেছেন। জনসভায় একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার চেয়ে আলোচনার টেবিলে বসলে অনেক ভুল-বোঝাবুঝিরই অবসান হতে পারে। উভয়ের লক্ষ্য যদি হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন, তা পূরণ করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। অতীতে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশ ও জাতির দুর্যোগময় মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশা করি এবারও তাঁরা দেশবাসীকে হতাশ করবেন না।

No comments

Powered by Blogger.