স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ৫৪ বছর by যোয়েল কর্মকার

কেটকে মহাশূন্য যানের উপযুক্ত বাহন হিসেবে প্রথম যিনি চিন্তা করেছিলেন তার নাম কনস্তানতিন ৎসিওলকোভস্কি (১৮৫৭ - ১৯৩৫)। এর সঙ্গে মহাশূন্যের বাহন রকেটের জ্বালানি হিসেবে তিনি গুঁড়ো জ্বালানির পরিবর্তে তরল জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলেন। এছাড়া মহাশূন্যের অপরিমেয় দূরত্বে এবং পুনরায় জ্বালানি গ্রহণের কথা চিন্তা করে তিনি বহু ধাপবিশিষ্ট রকেট ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।


তরল জ্বালানিচালিত প্রথম রকেটটি তৈরি করেছিলেন একজন মার্কিন বিজ্ঞানী, রবার্ট গডার্ড। ১৯২৬ সালের ২৬ মার্চ তার তৈরি প্রথম রকেটটি মাত্র ৪ ফুট উপরে ওঠে। এরপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জার্মান বিজ্ঞানীরা রকেটের ইঞ্জিনের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। তাদের তৈরি বিশাল রকেট ৬০ মাইল উঁচুতে উঠতে সক্ষম হয়। অবশেষে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ১৪৬৩ পাউন্ড ওজনের ২২.৮ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট রকেটের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১ পৃথিবীর কক্ষে স্থাপন করতে সমর্থ হন।
আজ আমরা স্পুটনিক উৎক্ষেপণের ৫০ বছর পূর্তি করছি। আধুনিক মহাকাশযানগুলো সৌরজগতের দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহগুলো পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে যোগাযোগ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নানারকম সুবিধা করে দিয়েছে। অথচ রকেট প্রথম নকশার কল্পনা করেন রুশ বিপ্লবী নিকোলাই কিবালচিচ। যিনি দ্বিতীয় আলেক্সান্দারকে হত্যার প্রচেষ্টার দায়ে তার ফাঁসি হয়। এরপর আসে স্কুলশিক্ষক কনস্তানতিন ৎসিওলকোভস্কির কথা। তিনিই প্রথম আন্তঃগ্রহ যাত্রার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। ৎসিওলকোভস্কির ১৮৯৫ সালের প্রথম বইয়ে তিনি তার প্রথম বইয়ে মহাশন্য ভ্রমণের কথা উলেল্গখ করেন। উল্লেখ্য, তখন কোনো উড়োজাহাজও ছিল না এবং ১৯০৩ সালে মহাশূন্যে রকেট মহাযানকে কী ভাবে নিয়ে যাবে তার ওপর ১৯০৩ সালে মৌলিক রচনা প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে তা বাস্তবে রূপ দেন মার্কিন বিজ্ঞানী রবার্ট গডার্ড। তারও আগে কোপার্নিকাস, টাইকোব্রাহে কেপলার, গ্যালিলিও হয়ে প্রথম তাত্তি্বকভাবে কৃত্রিমগ্রহের চিন্তা করেছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। এসব ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় বেশিরভাগ আবিষ্কার, প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের সঙ্গে মানুষের অকল্পনীয় কষ্ট আর দরিদ্রতা জড়িত। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, এসব উদ্ভাবনের বেশিরভাগকেই ব্যবহার করা হয় মানুষের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধে। আমরা যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে শিল্পকলার সমন্বয় ঘটাতে না পারি তাহলে আমাদের অবশেষে মধ্যযুগেই ফিরে যেতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.