এখন আমি কী করি

ট ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আমি। এ কারণে ছেলেবেলা থেকে পরিবারের সবার কাছ থেকে আদর একটু বেশিই পেয়েছি। হঠাৎ করেই সে জীবনে ছন্দপতন ঘটে মায়ের মৃত্যুতে। প্রচণ্ড খারাপ মানসিক অবস্থায় ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আমার সামনে হাজির হয় আমারই সহপাঠী বন্ধু অঞ্জন। তার প্রস্তাবে আমি কিছুটা দ্বিধায় পড়লাম_ দু'জন দুই ধর্মের হওয়ায়। কিন্তু অঞ্জনের বারবার আহ্বান আর ভালোবাসার আশ্বাস ধীরে ধীরে আমার সব সংকোচ কাটিয়ে


দিচ্ছিল। অঞ্জনের ভালোবাসায় আমি সাড়া দিলাম। মায়ের মৃত্যুর পর সংসার চলত বড় ভাবীর নির্দেশে। এমনও হয়েছে কলেজ থেকে ফিরে দেখেছি আমার জন্য কোনো খাবার রাখা নেই। ক্লান্ত শরীরে রান্না করে খেয়েছি। বাড়িতে থাকলে রান্নার কাজটা আমাকেই করতে হতো। ধীরে ধীরে মাস্টার্স পাস করলাম। এ সময় থেকে অঞ্জন আমাকে একটু একটু এড়িতে চলতে শুরু করে। আমি ফোন করলে রিসিভ করে না। মেসেজ পাঠালে উত্তর দেয় না। মুখোমুখি হলে সে বেশ সহজ স্বরে জানায়, আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা তার পক্ষে সম্ভব না। পরিবারের অমতে সে কিছুই করতে পারবে না। কিছুদিনের মধ্যেই অঞ্জনের বিয়ে হয়ে যায়। নিজের কষ্টের কথা বোনদেরও বলতে পারি না। কারণ তারা জানত আমরা শুধুই ভালো বন্ধু। ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে নানা জায়গায় চাকরির চেষ্টা করি। কিন্তু কোথাও কিছু হয় না। শুরু হয় বিয়ের চেষ্টা। পাত্রের সামনে হাজির হতে হয় নিজেকে সাজিয়ে। পাত্রপক্ষ আমাকে পছন্দ করলেও আমার ভাইবোনরা সবাই একমত হতে পারে না। আমি এভাবে পাত্রপক্ষের সামনে বারবার যেতে না চাইলে ভাইবোনরা আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। তারা বলে, মা নেই। কে দেখবে তোমাকে? আমাদের সবারই সংসার আছে। আমি তাদের বলেও বোঝাতে পারি না বারবার পাত্রপক্ষের সামনে সেজে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া আমার জন্য কতটা অপমানজনক। তারা বলে এটাই রীতি। এ কেমন রীতি! এ যুগের এক শিক্ষিত মেয়েকেও এভাবে বারবার পাত্রপক্ষের সামনে পরীক্ষা দিতে হবে কেন? এসব ব্যাপারে আমার বাবা যেন এক নীরব দর্শক। আমি এভাবে বারবার অপমানিত হতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। ওদের বোঝাতে চাই বিয়ে মানেই মেয়েদের মুক্তি_ এ কথা ঠিক নয়। জীবন যুদ্ধে আমি বারবার হেরে যেতে চাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
দড়াটানা, যশোর।

No comments

Powered by Blogger.