ওগো বধূ সুন্দরী

ত কয়েক দশকে বিয়ের সাজে পরিবর্তন এসেছে অনেক। যুগ আর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিয়ের সাজে আধুনিকতাকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি নারী। বিয়ের সাজের একাল-সেকাল নিয়ে দেশের খ্যাতিমান চার রূপ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন ইসরাত জাহানবর-কনে উভয়েই বিয়ের উৎসবের মধ্যমণি হলেও সবার দৃষ্টি থাকে কনের দিকেই। তার সাজ-পোশাক, হেয়ার স্টাইল, মেহেদি_ এ সবের পরিপূর্ণ সমন্ব্বয়ে কনে হয়ে ওঠে


আকর্ষণীয়। কিন্তু সৌন্দর্যের এই রূপ কালে কালে বদলেছে অনেক। কনের সাজের কালানুক্রমিক রূপান্তরের চিত্র নিয়ে রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল বললেন, 'সাদা-কালোর সে যুগে মেকআপের তেমন একটা রঙঢঙ ছিল না। সে সময় লিপস্টিক, টিপ, কাজল আর চুল বাঁধাই ছিল সাজের মূল উপকরণ। এর বাইরে তেমন কোনো সাজ ছিল না। কিন্তু সত্তরের দশকের শেষ দিকে মেয়েরা বিউটি পার্লারে যেতে শুরু করে। আর তখন থেকেই বিয়ের সাজে আসে ভিন্নতা।'
কনের সাজের এই পরিবর্তনকে দু'ভাবে দেখেন রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। প্রথমটি হলো, সাজের ধারণাগত পরিবর্তন। এর মানে বাড়িতে না সেজে পার্লারে গিয়ে সাজার চল। আর দ্বিতীয়টি হলো, সাজে গুণগত পরিবর্তন। সাজঘরে গিয়ে সাজার প্রবণতা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সাজের ধরনে কিন্তু খানিকটা ষাট-সত্তরের দশকের প্রভাব পড়েছে। এদিকে রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা কামাল বললেন, উঁচু করে চুল বাঁধা, কাজল দিয়ে টেনে চোখ সাজানো বা গোল একটা টিপ সে সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে। আর এখন সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিজের ইচ্ছা মতো বউ সাজা যায়। চোখের উপরের সেই লাল আইশ্যাডো আর কপালজুড়ে আলপনার দিন শেষ। একটা নির্দিষ্ট ঢঙে না সেজে বরং যেমন খুশি তেমন সাজের ধরনই দেখা যাচ্ছে।
রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন মিউনি বলেন, 'একটি মেয়ের জন্য বিয়ের তিনটি দিন, অর্থাৎ গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষ দিনগুলোকে আরেকটু বিশেষ করে তোলারই প্রচেষ্টা থাকে আমার। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে ভেতরের অর্থাৎ মনের সৌন্দর্যটা বেশি জরুরি। তাই আমি কনে সাজানোর সময় এটি মাথায় রাখি, যাতে সাজটি কনের নিজের পছন্দ হয় এবং তা যেন তার ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতাকে পুঁজি করে ন্যাচারাল লুকটা রাখার চেষ্টা করি সব সময়। কারণ ন্যাচারাল লুকই বেস্ট লুক।'
ফারজানা শাকিল আরও বলেন, ২০০০-এর পর থেকে তো প্রতিনিয়তই বদল হচ্ছে সাজ। আজ খোঁপা তো কাল বেণি, পরশু আবার ছেড়ে দেওয়া চুল। এই বিষয়টি রূপ বিশেষজ্ঞরাও দেখেছেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে। এখন মেয়েরা বিয়ের দিনও চোখে পরছে কালো আইশ্যাডো। চেহারার সঙ্গে যা মানাচ্ছে সেভাবেই সেজে নিচ্ছে। চোখে পরছে লেন্স এবং আইলেন্স। আর বিয়ের দিন আপনি সবার চেয়ে আলাদা। সেদিন সবার চোখ খুঁজবে আপনাকেই। আপনাকে হতে হবে সি্নগ্ধ ও আকর্ষণীয়। বিয়ের সাজের আগে কী কী জিনিস মনে রাখতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন এই চার রূপ বিশেষজ্ঞ :
০ যদি আপনার ত্বকে কোনো সমস্যা বা অ্যালার্জি থাকে সেটি তাদের আগেই জানান।
০ মেকআপ নেওয়ার আগে বিউটি এক্সপার্টকে বিয়ের পোশাকটি দেখান, তাহলে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে মেকআপ নিতে সুবিধা হবে।
০ পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফুল নির্বাচন করুন।
০ পোশাক যেন বডি ফিটেড হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। যে স্টাইলই নির্বাচন করুন না কেন, তা যেন আপনার ব্যক্তিত্ব, বয়স ও সময়ের সঙ্গে মানানসই হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
০ অনুষ্ঠান যদি দিনে হয়, হালকা ও ন্যাচারাল লুক নিন। রাতে হলে ড্রামাটিক লুক উত্তম। দিনে সিমার দেওয়ার দরকার নেই। তবে রাতে দিতে পারেন।
০ চুলে হালকা কালার করুন। যারা ফর্সা, তারা গ্রে বা ব্লু ও সফট পিংক লাগাতে পারেন। যারা কালো বা শ্যামলা, তারা ব্রাউন বা বারগেন্ডি কালার করুন।
০ হলুদ ফাউন্ডেশন এড়িয়ে চলুন। ছবি ভালো আসবে।
০ চোখের সাজ মেকআপের বিশেষ পর্ব। চোখের নিচে কালো দাগ, পাপড়িতে খুশকি বা অন্যান্য সমস্যা থাকলে তা দূর করা প্রয়োজন। তা না হলে চোখ নরম, আবেদনময় ও ন্যাচারাল দেখাবে না।
০ লিপস্টিকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লিপলাইনার ব্যবহার করুন। ডার্ক লিপলাইনার ব্যবহার করে লিপস্টিক হালকা লাগালে দেখতে খারাপ দেখাবে। লিপস্টিক ও আইশ্যাডো সময়, ঋতু ও গায়ের রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে লাগান। চোখের মেকআপ ডার্ক হলে ঠোঁটে লাগান হালকা রঙের লিপস্টিক। চোখের মেকআপ হালকা হলে ঠোঁটে ডার্ক কালারের লিপস্টিক লাগান।
০ টাচআপের জন্য হ্যান্ডব্যাগে পাউডার কম্প্যাক্ট, টিস্যু ও লিপস্টিক রাখুন।

No comments

Powered by Blogger.