আগেই জেনে নিন

বিয়ে প্রতিটি নারী-পুরুষের জীবনে নিয়ে আসে নতুন অধ্যায়। এই অধ্যায়কে সুন্দর এবং সুখময় করে তোলার জন্য প্রথমেই কিছু বিশেষ বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। বিয়ের পর বর-কনে উভয়ের প্রচেষ্টাতেই একটি সুন্দর সংসার গড়ে ওঠে। কিন্তু সাংসারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর যে কোনো রকম শারীরিক, মানসিক বা ব্যক্তিগত সমস্যা সংসারে দুঃখ বয়ে আনতে পারে। তাই বিয়ের আগেই বর-কনে উভয়েরই এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে


নেওয়া প্রয়োজন। বিয়ে-পরবর্তী দাম্পত্য জীবনকে সুখী এবং সুন্দর করে তোলার জন্য বিয়ের আগেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. উৎপলা মজুমদার।
বিয়ের আগে প্রথমে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে_ কনের বয়স যেন ১৮ বছরের কম না হয়। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে বিয়ে-পরবর্তী সময়ে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। বিয়ের আগে প্রতিটি ছেলে এবং মেয়ের রক্তের গ্রুপ জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ ম্যাচ না হলে পরবর্তী সময়ে সন্তান জন্মদানে সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া বিয়ের আগে যেসব মেয়ের হাই ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নয়তো বিয়ের পর গর্ভাবস্থায় এই সমস্যাটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের আগেই এই রোগ দুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ ছাড়া যাদের হেপাটাইটিস বি পজিটিভ ভাইরাস রয়েছে, তাদের বিয়ের আগেই এই রোগের ভ্যাক্সিন নেওয়া প্রয়োজন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে ইদানীং যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে_ জরায়ুর ক্যান্সার। তাই বিয়ের আগে জরায়ুজনিত কোনো সমস্যা থেকে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজন হলে ভ্যাক্সিন নিতে হবে। তা ছাড়া কোনো মেয়ে যদি অতিরিক্ত মোটা হয়ে থাকে তবে বিয়ের আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নয়তো পরবর্তী সময়ে তা দাম্পত্য জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। অতিরিক্ত মোটা হওয়ার ফলে অনেকে সন্তান ধারণে অক্ষম হয়ে পড়েন। আবার যেসব মেয়ের স্বাস্থ্য ভঙ্গুর বা অত্যাধিক দুর্বল তাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই বিয়ের আগে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠাই শ্রেয়।
কোনো মেয়ের যদি হার্টের সমস্যা থাকে তবে বিয়ের আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ সমস্যা যদি বেশি হয়ে থাকে তবে তার পক্ষে কখনোই সন্তান ধারণ করা সম্ভব হবে না। এগুলো ছাড়াও আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। অনেকের রক্তে জন্মের পর থেকেই রোগ থাকে। একে জেনেটিক ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বলা হয়। বংশপরম্পরায় এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। এর ফলে রক্তকণিকা ভেঙে যায় এবং সন্তান মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিয়ের আগে উভয়েরই রক্তে থেলাসেমিয়ার পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। তা ছাড়া যেসব পরিবারে জেনেটিক সমস্যা রয়েছে সেখানে আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
এসব ছাড়াও যারা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে, দাম্পত্য জীবনে এজন্য তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। স্বামী যদি ধূমপায়ী হয় তবে স্ত্রীর ওপরও তার প্রভাব পড়ে এবং স্ত্রী গর্ভবতী হলে সে ক্ষেত্রে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই সম্ভব হলে বিয়ের আগেই এ ধরনের খারাপ অভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.