বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০১১-মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের ৫০ বছর by আসিফ

র্তমান প্রজন্মকে মহাকাশ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু করতে এবং এর কল্যাণকর অবদানগুলোকে উৎসাহিত করতে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ একটি বিশ্বজনীন উৎসব। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ঘোষণা অনুযায়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড স্পেস উইক অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে প্রতি বছর অক্টোবরের ৪ থেকে ১০ তারিখে প্রায় বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় এ দিবসটি। এ বছর জাতিসংঘ বাংলাদেশকে তাদের সহযোগী দেশ হিসেবে বাছাই করেছে


মূলত দুটো ঘটনাকে সামনে রেখে 'বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ' পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথমটি হলো ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর পৃথিবীর অভিকর্ষের বাইরে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ 'স্পুটনিক-১' সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ, যা মহাকাশে অভিযানের পথ উন্মুক্ত করে। দ্বিতীয়টি হলো ১৯৬৭ সালের ১০ অক্টোবর চাঁদ এবং মহাকাশীয় অন্যান্য বস্তুসহ মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের প্রধান রাষ্ট্রগুলো কয়েকটি মৌলিক নীতি মেনে চলার চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ দুটি দিনকে স্মরণ করেই ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৪ থেকে ১০ অক্টোবর পালিত হয় 'বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ'। জাতিসংঘ অনুমোদিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড স্পেস উইক অ্যাসোসিয়েশন একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করে। বিশ্বের ৫৫টি দেশে এটি উদযাপন করে।
এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হলো_ 'মনুষ্যবাহী মহাকাশযানের ৫০ বছর'। ১৯৬২ সালের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো মনুষ্যবাহী যান মহাশূন্যে পাঠানো হয়। সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন 'ভোস্তক-১' মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন, যা ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের এক অনন্য নজির স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষ তার স্বপ্ন-পরিধির বিস্তার ঘটাতে পাড়ি জমিয়েছে চাঁদে। স্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ২০১০ সাল পর্যন্ত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন মনুষ্যবাহী মহাকাশে যান পাঠিয়েছে এবং বর্তমানে ভারত, ইকুয়েডর, জাপান, ইরান, মালয়েশিয়াসহ কিছু মহাকাশ সংস্থা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যম মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে সুয়্যজ রকেট (রাশিয়া), স্পেস শাটল (কেনেডি স্পেস সেন্টার, নাসা), আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এবং সেংজহু স্পেসক্রাফট (চীন) দ্বারা মহাশূন্যে মানুষ্যবাহী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
মহাকাশ অভিযান পরিচালনার মতো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে মানুষের পক্ষে মহাশূন্যে ছুটে চলা সম্ভব হয়েছে। মার্কিন পদার্থবিদ রবার্ট হাচিনস্ গডার্ড ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ প্রথমবারের মতো তরল জ্বালানিবিশিষ্ট রকেট মহাশূন্যে সফল উৎক্ষেপণ করেন। এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন অনেকটাই প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে বিজ্ঞানীদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহাকাশ অভিযানে বেশি মনোযোগ দেয়। যার ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো মহাকাশ গবেষণায় প্রাযুক্তিক বিকাশ ও বাস্তবায়নের দ্বারা উত্তরোত্তর সাফল্য লাভ করে।
বাংলাদেশে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উদযাপন
২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি নিয়মিতভাবে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উদযাপন করে আসছে, যার প্রধান ইভেন্টটি সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর গ্রামের মহাকাশ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর কক্ষে মনুষ্যবাহী যান প্রদক্ষিণের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালটি বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহের জন্য একটি স্মরণীয় বছর। তাই এ বছর বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হবে।
এ বছর ইউনাইটেড ন্যাশন অফিস অব আউটার স্পেস অ্যাফেয়ারস (টঘঙঙঝঅ) বাংলাদেশকে তাদের সহযোগী দেশ হিসেবে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০১১ উদযাপনের জন্য বাছাই করেছে। এ উপলক্ষ্যে এনায়েতপুরের মহাকাশ ভবনে ৩ থেকে ৫ অক্টোবর একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের ফকস্ টেলিস্কোপ প্রজেক্টের ডাইরেক্টর অব এডুকেশন ড. সারাহ রবার্টস্ ওই কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন। কর্মশালাটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞান অন্তর্ভুর্ক্ত করা এবং বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে জনপ্রিয় করা। ৩ অক্টোবর, ২০১১ সোমবার এনায়েতপুর মহাকাশ ভবন লনে 'ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ অন অ্যাস্ট্রোনমি' কর্মশালাটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ইউনাইটেড নেশনস অফিস অব আউটার স্পেস এ্যাফেয়ার্স, ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশন, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন এবং বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এআর খান, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. আলী আসগর, ইউনেস্কো বাংলাদেশ অফিসের প্রোগ্রাম অফিসার মিস শিরিন আখতার, নর্থ আয়ারল্যান্ড স্পেস অফিসের ডাইরেক্টর ড. রবার্ট হিল, ফকস্ টেলিস্কোপ প্রজেক্টের ডাইরেক্টর ড. সারাহ্ রবার্টস্ এবং বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি এফআর সরকার।
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব বা সংস্থা তাদের প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০১১ উদযাপন করতে ইচ্ছুক তারা বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০১১ এর জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করতে পারে। এ জন্য ডড়ৎষফ ঝঢ়ধপব ডববশ-২০১১ এই লেখা দিয়ে একটি ব্যানার টানাতে হবে। বিস্তারিত জানার জন্য ই-মেইল :frsarker@yahoo.com.
এদিকে ডিসকাশন প্রজেক্টও নারায়ণগঞ্জে সপ্তাহের শেষের দিকে ১০ অক্টোবর মহাকাশ সপ্তাহ উদযাপন করবে। এ উপলক্ষ্যে discussionprojectbd.or ওয়েবসাইটে বিশ্ব মহাকাশ বিষয়ক পাতা খুলবে। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা জানার জন্য ডা.জেনিথ ০১৭১৫৯৩৭৭৭৩ এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৪ থেকে ১০ তারিখে উদযাপিত এই আলোচনা সভার খবর জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ-২০১১ এর বার্ষিক রিপোর্ট বইতে প্রকাশিত হবে। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবি www.flickr.com এ আপলোড করা হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.