কিচিরমিচির বই

তোমাদের জন্য রুম টু রিড প্রকাশ করেছে পাঁচটি অনেক মজার বই। বইগুলোর কথা জানাচ্ছেন তোমাদের প্রিয় বই পোকা আশিক মুস্তাফানামটি পাখির টুনটুনিডানা মেলে মা পাখিটা আদর করে বলে, 'আয় সোনারা, আয় চলে আয়, আমার ডানার তলে।'মায়ের ডানা ছেড়ে, মায়ের আঁচল ছেড়ে থাকতে কার ভালো লাগে, বলো তো? বলবে, কারও না। আসলেই তাই। পুঁচকে টুনটুনি ছানাদেরও ভালো লাগে না। তাদের ছেড়ে থাকতে আবার মা টুনটুনিটারও ভালো লাগে না। ছানাগুলো তো পুঁচকে। এখনও উড়তে শেখেনি। তাই তারা দিনমান বাসায় থাকে।


মা টুনটুনিটাও তাদের ছেড়ে কোথাও যায় না। বাসার আশপাশে, ছানাদের কাছে কাছে থাকে। তাদের কিচিরমিচির শব্দ শোনে। মা টুনটুনি ছানার ডাকাডাকি শুনে নিজের খাবারের কথা ভুলে যায়। তবে সে পুঁচকেদের খাবারের কথা ভোলে না। ফুড়ূৎ করে বড় একটা উড়াল দেয়। খুঁজে নিয়ে আসে খাবার। ছানাদের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে খাওয়ায়। খাবার খেতে তাদের কী আহ্লাদ! বাপরে, মায়ের মুখ থেকে চোখ সরায় না একটুর জন্যও। মায়ের খুশিও যেন আর ধরে না। তো হাসিখুশি টুনটুনিদের এলাকায় একদিন ঝড় আসে। সব উলটপালট হয়ে যায়। মা টুনটুনিটার চোখের ঘুম হারিয়ে যায়। না জানি কিছু হয়ে যায় তার পুঁচকেগুলোর! না তেমন কিছুই হয় না।
আসলে হয় কি হয় না? হলেও তা কেমন করে হয়? আর মা টুনটুনিটা কী দেখে খুশি হয়? এমন আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পড়ো 'নামটি পাখির টুনটুনি' বইটি। মেহেরুবা নিশার লেখা এ বইয়ে মা টুনটুনি, বাবা টুনটুনি, তাদের পুঁচকে ছানা আর তাদের এলাকার ছবি এঁকেছেন মোহোসেনা হোসেন জয়া।
মিনির বেনীআসহকলা
মিনি তো মিনিই। তোমাদের এমন কেউ কি আছো যে মিনি পোষোনি কিংবা এখনও পুষছো না? মিনিরা যা দুষ্টু হয়! শুধু আদর কাড়ে। শুধু মনটাতে ঢিল দিয়ে বসে! রাজ্যের আজব-বিজব কাণ্ড ঘটাতেও মিনিদের ঝুড়ি নেই। এই যে একটা মিনি। কী কাণ্ডটাই না সে করে বসলো। এক সকালে সে হাঁটতে বের হলো। বেরিয়েই না সে আকাশে একটা রঙধনু দেখতে চাইলো। চাইলো তো চাইলোই। কিন্তু তোমরাই বলো ভাই। রঙধনু কি আমাদের কারও ইচ্ছায় ওঠানামা করে? তো সে রঙধনু দেখবেই। আকাশে এই ভোর সকালে সে রঙধনু ওঠাবেই। মিনি করলো কি, জারুল ফুলের কাছ থেকে বেগুনি, মাছরাঙা থেকে নীল, আকাশ থেকে আসমানি, আম পাতার কাছ থেকে সবুজ, সরষে ফুলের কাছ থেকে হলুদ, কমলা লেবুর কাছ থেকে কমলা আর লাল মোরগের কাছ থেকে লাল রঙ নিয়ে আকাশে উঠে একটা আস্ত রঙধনু এঁকে বসলো। তারপর কাক আর বকের সঙ্গে কথা বলে সাতটি রঙের নামের প্রথম বর্ণ দিয়ে নাম দিলো_ বে-নী-আ-স-হ-ক-লা। আর লেখক শাহীন আজিজ বইটির নাম দিলেন 'মিনির বেনীআসহকলা'। আর মিনিকে রঙ করে ঢঙ করে আঁকলেন কে_ তা জানতে বসে আছো নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, রঙঢঙ করা মিনিটা আর তার রঙে নেওয়া ফুল-পাখি, পাতা, মোরগ ও কাক-বক এঁকেছেন মিনির বন্ধু সব্যসাচী হাজরা।
পাতার গাড়ি
ফড়িংয়ের শখ হলো বেড়াবে। কোথায় বেড়াবে? কোথায় যাবে? মনে মনে সে ঠিক করলো, দাদার বাড়ি যাবে। তো দাদার বাড়ি যাবে কিসে? ফড়িংটানা অদ্ভুত একটা গাড়ি বানিয়ে বসলো। পাতার গাড়ি। সঙ্গে নিলো কলা আর মুড়ি। ভেবো না আবার সে একটা পেটুক। আসলে পথে যদি খিদে লেগে বসে, তখন কার কাছে যাবে সে? কার বাড়ি গিয়ে বলবে খিদের কথা? তাই সে খাবার নিয়ে নিলো আর কি!
তো সে যাচ্ছে তো যাচ্ছে। পথে দেখা ছাতা মাথায় দেওয়া ব্যাঙের সঙ্গে। ওমা! ব্যাঙটানা ফড়িংয়ের দাদার বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরলো। ফড়িংটাও গলে গেলো ব্যাঙের কথায়। তাকে নিয়ে নিলো। তারপর আবার যাচ্ছে। পথে দেখা মৌমাছির। মৌমাছিটাও ব্যাঙের মতো বায়না ধরলো। ফড়িং নিয়ে নিলো তাকেও। আবার চলতে শুরু করলো। এবার সামনে পেলো ময়ূর। একি! সেও বেঁকে বসলো। বললো, 'আমাকে না নিলে কিন্তু মন খারাপ করবো।' শুনে ফড়িংয়েরও মন খারাপ হয়ে গেলো। সঙ্গী বানালো তাকেও। চলতে শুরু করলো তারা। চলতে চলতে পেঁৗছে গেলো দাদার বাড়ি। আরে দাদার বাড়ি গিয়ে দেখে ব্যাঙ এনেছে ছাতা। মৌমাছি এনেছে মধু আর ময়ূর শুরু করেছে দাদার সঙ্গে নাচা। এসব দেখে ফড়িংয়ের খুশি তো আর ধরে না! সেও নাচতে শুরু করলো। ফড়িংয়ের এ বইটি লিখেছেন মাজহারুল করিম ও মোঃ মোসলে উদ্দিন ভঁূইয়া। আর ভেতরের ছবিগুলো এঁকেছেন সব্যসাচী হাজরা।
ফুঁ
জাদুকর জাদু দিয়ে সব উলটপালট করে দেয়। এই কিছু একটা এখন দেখলে তো একটু পর সেটা উধাও। জাদুকর কতো কী করতে পারে! জাদুকররা শুধু হাতের কাঠি দিয়ে নয়, ফুঁ দিয়েও অনেক কিছু করতে পারে। এই ধরো তোমার পুরান জামাটাকে নতুন করে দিতে পারে। ইলিশ মাছকে ফুল বানিয়ে দিতে পারে। দোয়েল পাখিকে বেলুন বানিয়ে দিতে পারে। কাগজের টুকরোকে আস্ত একটা গাছ বানিয়ে দিতে পারে। বইকে বানাতে পারে টেলিভিশন। আরও কতো কি যে পারে জাদুকর! জাদুকরের এমন কাণ্ড দেখে পুঁচকে মিনা অবাক। সে ভাবে, জাদুকরের মতো সেও ফুঁ দিলে সব এমন পাল্টে যাবে কিনা! সে চুপিচুপি ফুঁ দিয়ে যায় সামনে যা পায় তাতেই। কিন্তু রে ভাই, জাদুকরের মতো তার ফুঁতে কিছুতেই কিছু হয় না। মানে কিছুরই রূপ পাল্টায় না। এভাবে একদিন দুদিন যায়। তার নিজের ওপর নিজের রাগ বাড়ে। একদিন সে তার ভাইয়াকে ডেকে বলে...। কী বলে তা বলবো না ভাই। তোমরা বইটা পড়ে নিজেরাই জেনে নাও। তোমাদের জন্য 'ফুঁ' নামের এই বইটি লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ। ভেতরে জাদুকর আর তার ফুঁ দিয়ে পরিবর্তন হওয়া জিনিসপত্রের ছবি এঁকেছেন সহিদ কাজী।
দোয়েল ও জোনাকি
দোয়েল থাকে তার বাড়িতে। জোনাকি থাকে দোয়েলের বাড়ির কাছে। সে দোয়েলকে দেখে খুব কাছ থেকে। দোয়েলের বিপদে এগিয়ে আসে। তার গায়ে হাত রাখে। তাকে সাহস জোগায়। বড়রা এ কথা শুনে বলবেন, জোনাকির আবার হাত আছে না কি? সে কেমন করে দোয়েলের গায়ে হাত রাখবে? বলি, তোমরা তো আর বড় না। তোমরা জানোই দোয়েলের গায়ে হাত রাখার মতো হাত নিশ্চয়ই আছে জোনাকির। দোয়েলকে সাহস জোগানোর মতো মনোবলও আছে জোনাকির। আর যদি দোয়েলের জায়গায় জোনাকি হয়? মানে জোনাকিটার বিপদ হলে দোয়েল তার গায়ে হাত রাখতে পারে? বলবে, আবশ্যই পারে। হ্যাঁ আসলেই তাই। জোনাকির পাখায় ব্যথা লাগে। কথাটা শুনে দোয়েল এগিয়ে যায়। জোনাকির গায়ে হাত রাখে। তাকে সাহস দেয়। জোনাক পোকাকে ভালো করে তোলে। একদিন জোনাক পোকা দোয়েলের বাসা দেখতে গিয়ে দেখে, বেচারীও অসুস্থ। তার খুব মন খারাপ হয় বন্ধু দোয়েলের জন্য। দোয়েলকে ওষুধ খাইয়ে ভালো করে তোলে। দোয়েল আর জোনাক পোকার বন্ধুত্ব নিয়ে তোমাদের জন্য বইটি লিখেছেন ইকবাল খন্দকার। আর দোয়েল-জোনাকির ছবি এঁকেছেন ইউসুফ আলী নোটন।
বইগুলো পেলে পড়ে জানিও, কেমন লাগলো।
 

No comments

Powered by Blogger.