ব্যাংক এবার সেলফোনে by হাসান জাকির

দেশের প্রান্তিক এলাকার ছোট্ট স্টেশনারি দোকান, বিপণি বিতান, ওষুধ বিকিকিনির ঘর থেকে শুরু তরে ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এক একটি ব্যাংক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেলফোনের মাধ্যমে এভাবে পেঁৗছে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবাছোট্ট একটি সেলফোন রিচার্জের দোকান। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবির বাহারি বিজ্ঞাপনী ব্যানারে সাজানো গাজীপুরের রাফি টেলিকম অ্যান্ড মোবাইল সার্ভিস।


এই দোকানেই রয়েছে ব্র্যাকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা 'বিকাশ'। আলাদা করে চোখে না পড়লেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সব সেবাই দিচ্ছে রাফি টেলিকম। এভাবে দেশের প্রান্তিক এলাকার ছোট্ট স্টেশনারি দোকান, বিপণি বিতান, ওষুধ বিকিকিনির ঘর থেকে শুরু তরে ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এক একটি ব্যাংক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেলফোনের মাধ্যমে এভাবে পেঁৗছে যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। দেশে বর্তমানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাংক ব্যাংক শুরু করেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত ঢাকা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এবি, দি সিটি, প্রিমিয়ার এবং সাউথইস্ট ব্যাংক অচিরেই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আর ব্যাপক পরিসরে দেশব্যাপী মোবাইল ব্যাংক ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং চিত্র। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রচলিত শাখা ব্যাংকিংয়ের বিকল্প পদ্ধতি, যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক সেবা পেঁৗছে দেওয়া হচ্ছে। সেলফোনের সহায়তায় নানা রকম ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা দেওয়া হচ্ছে এখান থেকে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে টাকা জমাদান, টাকা উত্তোলন, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণ, সরকারি অনুদানপ্রাপ্তি, তহবিল স্থানান্তর, মোবাইলে তাৎক্ষণিক ব্যালেন্স রিচার্জ ইত্যাদি। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা সম্ভব। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর দ্বিতীয় অধিকারী হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। গত ২১ জুলাই 'বিকাশ' নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা উদ্বোধন করে ব্যাংকটি। উভয় ব্যাংকেরই পাঁচ শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং শাখা চালু রয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী প্রভৃতি জেলায় ইতিমধ্যে এ ব্যাংকিং সেবা শুরু হয়েছে। অচিরেই দেশের অন্যান্য জেলাতেও মোবাইল ব্যাংকিং চালু হচ্ছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও বিকাশের প্রায় এক হাজার এজেন্টের মাধ্যমে পাঁচ হাজার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। দ্রুত এ সংখ্যা বাড়ছে। ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট রাজধানীর তেজগাঁওয়ের টেলিটোন লিমিটেড, হাইটেক ও বুলবুল এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা এখনও ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সিম পায়নি। আগামী এক মাসের মধ্যে সিম পাওয়া যাবে এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে। ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখার প্রধান কামাল কাদির বলেন, মূলত হাতের কাছে এবং সহজে ঝামেলা ছাড়া ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষ মোবাইল ব্যাকিংয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনে নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইউএসএসডি [আনস্ট্রাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা] অথবা এসএমএস+আইভিআর [ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স] প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ইউএসএসডির ক্ষেত্রে নির্দেশনা এবং পিন, ইউএসএসডির মাধ্যমে এবং এসএমএস ও আইভিআরের ক্ষেত্রে নির্দেশনা বা আইভিআর কলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। পিন লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউএসএসডি ও আইভিআর দুটোই নিরাপদ। যেহেতু মোবাইল ফোনসেট, পিন ও চেক ডিজিট আয়ত্তে নেওয়া ছাড়া হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে না, তাই গ্রাহকের টাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রতারণামূলক লেনদেনের আশঙ্কাও কম। এ ছাড়া চেক ডিজিট ছাড়া টাকা জমা দেওয়া যাবে না বলে অনাকাঙ্ক্ষিত টাকা জমাদান থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ এ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এদিকে মোবাইলে টাকা লেনদেনে গ্রাহকরা যাতে হয়রানির স্বীকার না হন সেজন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাত কোটি। এই বিপুল জনসংখ্যাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা গেলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বার্থক রূপায়নে তা দারুণ ভূমিকা রাখবে।
 

No comments

Powered by Blogger.