গৃহশ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হবে কবে?-শিশু সাথীর গৃহদাসী জীবন

আট বছরের শিশু সাথীর শরীরে যে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন, তা পাশবিক, বর্বর ও নিষ্ঠুরতারই চিহ্ন। যারা তার ওপর এই নির্যাতন করেছে, তারা সভ্য-ভব্য পরিবার হিসেবেই সমাজে পরিচিত। এ ধরনের পরিবারে অপরিহার্যভাবেই সাথীর মতো শিশু-কিশোরী-তরুণীদের ‘কাজের লোক’ হিসেবে রাখা হয়; এবং অনিবার্যভাবেই দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই


নির্যাতনের শিকার হয়। মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি নজরে এনেছে, এখন সরকারের নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব এ ধরনের গৃহপরিচারক-পরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে এবং নির্যাতন হলে শাস্তির বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।
দূরদূরান্তের দরিদ্র লোকজন বড় বড় শহরে ‘কাজের লোক’ হিসেবে আসে। সাথীর মা এভাবেই মেয়েকে শিশুশ্রমে নিয়োজিত করেছেন। কিন্তু হাল দেখে বোঝা যায়, তার বেলায় ‘শ্রমিক’ কথাটি একেবারেই খাটে না; তাকে গৃহদাসের মতো ব্যবহার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে সাথীদের লাগে। কিন্তু অন্যদের সুখের জন্য যে খাটে, সে কী পায়? দিনাজপুরের ইয়াসমিনের কথা মনে আছে? চরম নির্যাতিত কিংবা নিহত হলেই কেবল তারা ‘খবর’ হয়। যেসব গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর পাষাণ আচরণে এদের সর্বনাশ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা ভদ্র মানুষ হলেও তাদের মনের গহিনে যে প্রভুসুলভ দানবিক চোরাটান আছে, সাথীরা তার শিকার।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, র‌্যাব সাথীকে উদ্ধার করে। তার শরীরে তাতানো রডের পোড়া দাগসহ গভীর ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। এই ক্ষতচিহ্নগুলোই তার অমানবিক দুর্দশার করুণ গাথাকে প্রকাশ করে। ‘ঘর হইতে আঙিনা বিদেশ’ যার, বরিশালের পাড়াগাঁয়ের সেই সাথী ঢাকায় এসেছিল ‘ভালো’ থাকার আশায়।
প্রায়ই গণমাধ্যমে এ ধরনের সাথীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, এমনকি নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা প্রকাশিত হয়। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতে কী হয়, এসব ঘটনা তারই একটা দর্পণ। আমাদের উচিত, সাথীদের নির্যাতিত শরীরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মুখটি দেখে নেওয়া। সাথীর নির্যাতকদের কঠোর শাস্তি হোক।

No comments

Powered by Blogger.