খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন শুরু

শিশুদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের জাতীয় সম্মেলন ২০১২। সংগঠনের গৌরবের ৬০ বছর পূর্তিতে এবারের সম্মেলন জাকজমকপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘নয় শঙ্কা নয় ভয়, চাই শিক্ষা আনন্দময়’ স্লোগান নিয়ে। সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, বহুল প্রচারিত দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও সময় টেলিভিশন।
শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

জাফর ইকবাল তার উদ্বোধনী বক্তব্যে দেশের সব শিশু-কিশোরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা করতে পারলে বাংলাদেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।

শিশুদের সত্যিকার মানুষ এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে খেলাঘরকে আরো বেশি ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম বলেন, ‘খেলাঘরের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিশুদের গড়ে তুলতে কাজ করছি। কারণ, খেলাঘরই একমাত্র শিশু সংগঠন, যারা নিজেদের ব্যানার নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। শিশুরাই হচ্ছে দেশ-জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমেই সূচিত হবে দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ।’

স্বাগত বক্তব্যে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আনন্দময় শিক্ষার মাধ্যমেই শিশুর যথাযথ বিকাশ সম্ভব।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। এরাই হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা ও বিনোদনসহ প্রতিটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তারা আরও বলেন, ১৯৫২ সালের ২ মে দৈনিক সংবাদের পাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে খেলাঘর আসর। এরপর থেকেই এর বিস্তৃতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে খেলাঘর আসরের সংগঠকরা খেলাঘর আসরের ব্যানারেই অংশগ্রহণ করেছিলেন।

এর আগে সহস্রকণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও খেলাঘর সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কর্মসূচি শুরু হয়। হাজারো শিশু-কিশোরের কলকাকলিমুখর অংশগ্রহণে সম্মেলনস্থল উৎসবের এক মিলনমেলায় রুপ হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন পথ ঘুরে শিশু একাডেমীতে শেষ হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ, শিল্পী লায়লা হাসান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম জহির, রেজাউল করিম প্রমুখ।

সম্মেলনের দু’দিনব্যাপী কাউন্সিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, সমাপনী অনুষ্ঠানসহ অন্য আয়োজনগুলো শিশু একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে জাতীয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, এবারের সম্মেলনে ২টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের ৬০ বছর পূর্তি।
    
খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক এস আসলাম লিটন বাংলানিউজকে জানান, এবারের সম্মেলনে ৩ হাজার শিশু-কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খেলাঘর আসরের জেলা, উপজেলার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। দেশের সব শাখা আসর, উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটির প্রতিনিধিরা এসেছেন এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে।

শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি।

No comments

Powered by Blogger.