কাদের মোল্লার লাশ আলাদা স্থানে কবরস্থ করার দাবি

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর তাঁর লাশ ‘আলাদা স্থানে’ কবরস্থ করার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা করা না হলে তাঁর কবরকে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকেরা মাজারে পরিণত করবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের আদর্শগত ভিত্তি এবং নির্বাচন ২০১৪’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মুনতাসীর মামুন এ কথা বলেন।

সূচনা বক্তব্যে মামুন বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আমরা আশা করি যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। যুদ্ধাপরাধীদের যদি আলাদা স্থানে কবরস্থ করা না হয় তাহলে জামায়াতে ইসলামী ওই কবরকে মাজার বনিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করবে।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশকে ভারতের সহায়তার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারতের সাহায্য বাংলাদেশের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে।

অনুষ্ঠানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, মাওলানা আবদুল মান্নানসহ যেসব স্বাধীনতাবিরোধী ইতিমধ্যে মারা গেছেন, ভবিষ্যতে যাঁরা মারা যাবেন বা যাঁদের ফাঁসি হবে হবে—তাঁদের সবার লাশ নির্দিষ্ট একটি জায়গায় কবরস্থ করতে হবে। এতে সবাই জায়গাটিকে ঘৃণাসূচক হিসেবে দেখতে পারবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ওপর ভারতের স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করে বলে ভারত এ দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের মত প্রকাশের একমাত্র উপায়।

পঙ্কজ সরন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ১৯৯১ সালে যুদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পছন্দ করে। এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নির্বাচন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে পঙ্কজ সরন বলেন, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ভারত বাংলাদেশের উন্নতি চায়। সে লক্ষ্যে ভারত সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। দুই দেশের উন্নয়নের জন্য দুই দেশকে দুই দেশের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের নানা সমস্যা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শ দেয়, কিন্তু কখনো কোনো কিছুর জন্য  চাপ দেয় না। তিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়। তাদের ভ্রাতৃত্ববোধকে আমরা সম্মান জানাই।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল ও সাংবাদিক হারুন হাবীব। আলোচনা শেষে শাহরিয়ার কবিরের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কাদের মোল্লার রায় দ্রুত কার্যকর করা হবে: কামরুল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘দ্রুততম’ সময়ে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

কামরুল বলেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি। রায় কার্যকরে এখন আর কোনো বাধা নেই।’

আগামী এক মাসের মধ্যে কিংবা এই সরকারের মেয়াদেই রায় কার্যকর করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই রায় নিয়ে ‘রিভিউ পিটিশন’ করার কোনো সুযোগ নেই। রায় কার্যকরের সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমাও নেই।’

রায়ের কপি এখন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল, কারা কর্তৃপক্ষ ও ঢাকার জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

রায় কার্যকরের আগে কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন বলেও জানান আইন প্রতিমন্ত্রী।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত রায় দেন, যার পূর্ণাঙ্গ কপি আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হলো।

কপি পাওয়ার ২১ দিন আগে রায় কার্যকরের সুযোগ নেই: রাজ্জাক
রিভিউ সুযোগ না দিয়ে রায় কার্যকর এখতিয়ারবহির্ভূত হবে বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ২১ দিন আগে রায় কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই।’

বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার মৃত্যদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। সুপ্রিমকোর্টের বিধি অনুযায়ী রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে মাত্র আমরা সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই রায়ে বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করব।’

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় মনে করে যেহেতু এটি আইসিটি অ্যাক্টের অধীনে একটি রায়, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী রায় কার্যকর করবে। জেল কোডের বিধান অনুসরণের প্রয়োজন নেই। এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ভুল।’

তিনি বলেন, ‘কারণ আইসিটি অ্যাক্টের কোথাও এই আইনের অধীনে প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ কিভাবে কার্যকর করা হবে তা বলা হয়নি। এই কারণেই জেল কোডের বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কর্তৃপক্ষের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই। জেল কোড অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ২১ দিনের আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী রিভিউ পিটিশন দাখিল করার অধিকার আবদুল কাদের মোল্লার রয়েছে। আবদুল কাদের মোল্লার দাখিলকৃত রিভিউ পিটিশন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের যে সংবিধানিক এখতিয়ার রয়েছে, তা অন্য কোনো আইন বলে কেড়ে নেওয়া যাবে না।’

আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আবদুল কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ডে রাপান্তরের জন্য সরকারের দাখিলকৃত আপিল চলবে কি চলবে না সে প্রশ্ন উঠেছিল। আপিল বিভাগ এ ব্যাপারে দীর্ঘ শুনানি গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি এ ব্যাপারে মতামত নেয়ার জন্য এমিকাস কিউরি নিয়োগ করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘আবদুল কাদের মোল্লার মামলা এর চেয়েও অধিকতর ভালো অবস্থানে রয়েছে। কারণ আমরা মনে করি তার রিভিউ পিটিশন দাখিলের অধিকারকে সংবিধান কর্তৃক নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেয়া হয়েছে।’

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের অধীনে এটি আপিল বিভাগের প্রথম রায়, যেখানে রিভিউ প্রশ্ন উঠেছে। রিভিউ চলবে কি চলবে না সেটি একটি আইনগত প্রশ্ন। এটি সম্পূর্ণভাবে আপিল বিভাগের এখতিয়ার। একমাত্র আপিল বিভাগই নির্ধারণ করতে পারে, এই রিভিউ শুনানির এখতিয়ার তাদের আছে কি নেই।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতসমূহের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, কোনো বিষয় সুপ্রিমকোর্টের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সুপ্রিমকোর্টকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবদুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে এই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতির ব্যতিক্রম ঘটার কোনো কারণ নেই।’

ব্যরিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘যদি আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন মেরিটে অথবা এখতিয়ারে প্রশ্নে খারিজ হয়ে যায় কেবলমাত্র তখনই তা কার্যকরের প্রশ্ন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জেল কোডের বিধান অনুসরণ করতে হবে। ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে তদানীন্তন আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, এক্ষেত্রে জেল কোডের বিধান অনুসরণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো আইন ও সংবিধানের সুস্পষ্ট বিধান। বাংলাদেশের সকল ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষকে এই বিধান মেনে চলতে হবে। আমরা আশা করি, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সকল ব্যক্তি আইন অনুযায়ী কাজ করবেন। কারণ কোনো ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’

No comments

Powered by Blogger.