ম্যান্ডেলার জন্য শোকাহত তারকাজগৎ
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে যখন শোকাহত সারাবিশ্ব, তখন সেই শোকের মিছিলে যোগ দিয়েছেন বিনোদনজগতের শিল্পীরাও।
সংগীতশিল্পী বনো, অভিনেতা মরগ্যান ফ্রিম্যান থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব বয়সী শিল্পীরা জানিয়েছেন ম্যান্ডেলার প্রতি তাদের শেষ শ্রদ্ধা।
ক্যারিয়ারজুড়ে মানবতাবাদী কাজে নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী বনো ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য বেছে নেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারকে।
তিনি লেখেন, “ব্যাপারটা যেন এমন-- ম্যান্ডেলার জন্মই হয়েছিল মানুষকে বিনয়, ভালোবাসা এবং সর্বোপরি ধৈর্য শেখানোর জন্য। সবশেষে, ম্যান্ডেলা আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ঘৃণার বদলে ভালোবাসা হয়ে উঠতে পারে যে কোনো সমস্যার সমাধান। এ কারণে নয় যে তিনি কখনও ঘৃণার মধ্যে বসবাস করেননি; বরং এই কারণে যে তিনি বুঝতে পেরেছেন ভালোবাসাই হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান। জীবনের সর্বস্ব বাজি রেখে তিনি খেলেছিলেন। তিনি নিজের পরিবার, নিজের দেশ, জাতি, নিজের সময়-- এমনকি নিজের জীবনকেও বাজি রেখেছিলেন। জিতে এসেছেন সব ধরনের লড়াই। ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য তার এই জেদ যেন ঈশ্বরকেও হার মানিয়েছে।”
নেলসন ম্যান্ডেলা তার জীবদ্দশাতেই নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে স্বজাতিকে এনে দিয়েছিলেন বর্ণবৈষম্যহীন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা। ম্যান্ডেলার আদর্শ বুকে ধারণ করেই বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বেঁচে আছে মানুষের চোখে। শান্তিকামী সেসব সাধারণ মানুষের মতোই মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকারা প্রকাশ করেছেন শোক, জানিয়েছেন ভালোবাসা।
বক্সার মাইক টাইসন লেখেন, “আমি এখন আলজেরিয়ার ওরান শহরে আছি। আফ্রিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি শুনলাম নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর খবর। তার পরিবারের জন্য আমি প্রার্থনা করছি।”
সাবেক ফুটবলার ডেভিড বেকহাম লেখেন, “আমি অন্তরের গহীন থেকে শোক প্রকাশ করছি আফ্রিকার মানুষ এবং ম্যান্ডেলার পরিবারের জন্য। আমরা আজ একজন সত্যিকারের ভদ্রলোক এবং ভালো মনের মানুষকে হারিয়েছি। এমন একজন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার, যার মনে সকলের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা বিদ্যমান। তার আত্মা শান্তি পাক।”
অভিনেত্রী হুপি গোল্ডবার্গ টুইট করেন, “আমি সারাবিশ্বের সব মানুষকে জড়িয়ে ধরতে চাই। কারণ এইমাত্র আমি জানতে পেরেছি মাদিবা আর বেঁচে নেই। আশা করছি নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মা শান্তি পাবে। এবার তার সময় হয়েছে শান্তিতে ঘুমোবার। তার পরিবারের প্রতি রইল সহানুভূতি।”
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন লেখেন, “আমার বন্ধু ম্যান্ডেলাকে আমি কোনোদিন ভুলব না।”
মাইক্রোসফট এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দাতব্য কাজে নিয়োজিত ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের টুইট, “যখন আমি এবং আমার স্ত্রী মেলিন্ডা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে দেখা করেছি, আমরা খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তার মহত্ত¡ এবং সাহসিকতা পুরো বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। আজকের দিনটা আসলেই বড় দুঃখের দিন।”
হলিউডের সিনিয়র অভিনেতা মরগ্যান ফ্রিম্যান ২০০৯ সালের সিনেমা ‘ইনভিকটাস’-এ অভিনয় করেছিলেন ম্যান্ডেলার চরিত্রে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যান্ডেলা ছিলেন অনেকের কাছে সাধক, সবার কাছে নায়ক। যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন স্বাধীনতা, আত্মসম্মান এবং আত্মমর্যাদা। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের মধ্যে তিনি রেখে গেছেন তার আদর্শ।”
দক্ষিণ আফ্রিকার অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন টুইটারে পোস্ট করেন, “আমার ভালোবাসা রইল ম্যান্ডেলার পরিবারের জন্য। মাদিবার আত্মা শান্তি পাক। আপনার অভাব সবসময়ই অনুভূত হবে, কিন্তু আপনার আদর্শ এই বিশ্বের সবার মনে থাকবে।”
পপতারকা রিয়ানার টুইট, “নেলসন ম্যান্ডেলা আপনি আপনার জাতিকে সবসময়ই গর্বিত করেছেন। আপনাকে সবসময় সবাই মনে রাখবে।”
অভিনেতা জেমি ফক্স লেখেন, “নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মা শান্তি পাক। তিনি ছিলেন একজন সাহসী নেতা, চমৎকার একজন মানুষ, অনুপ্রেরণা এবং সত্যিকারের একজন নায়ক। সত্যিই অদ্বিতীয়। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।”
পপতারকা বিয়োন্সি নোলস লেখেন, “মানুষের জন্য আপনি নিজের জীবনে যতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আত্মা শান্তি পাক।”
অভিনেত্রী লিন্ডসে লোহান লেখেন, “একটি ভালো মন এবং একটি ভালো মস্তিষ্ক হতে পারে একটি চমৎকার সংমিশ্রণ, নেলসন ম্যান্ডেলা হলেন তার প্রমাণ।”
অভিনেত্রী অলিভিয়া ওয়াইল্ড লেখেন, “ম্যান্ডেলা, স্বাধীনভাবে, শান্তিতে ঘুমান আপনি।”
অভিনেতা নিল প্যাট্রিক হ্যারিস টুইট করেন, “নেলসন ম্যান্ডেলা, আপনি ছিলেন এক অবিশ্বাস্য মানুষ। আপনার আত্মা শান্তি পাক।”
নির্মাতা মাইকেল মুর টুইট করেন, “আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম নেলসন ম্যান্ডেলা কোনোদিন কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সত্যি মুক্তি পেলেন এবং প্রেসিডেন্ট হলেন। আমি বুঝতে পারলাম বিশ্বে যে কোনো কিছু সম্ভব।”
দুঃখজনক এক কাকতালীয় ঘটনা হল, সেদিন রাতে ইংল্যান্ডে ম্যান্ডেলার জীবনীমূলক সিনেমা ‘ম্যান্ডেলা: দ্য লং রোড টু ফ্রিডম’-এর প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার স্ত্রী কেইট মিডলটন। তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা অবস্থায় জানতে পারেন এই কিংবদন্তি নেতার মৃত্যু সংবাদ। অবশেষে ম্যান্ডেলার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন শোকাহত রাজদম্পতি।
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা তার নিজের দেশের মানুষের কাছে অনেক বেশি পরিচিত ‘মাদিবা’ নামে, এটি তার গোত্র নাম। নিজের গোত্রে গ্রামীণ জীবন থেকেই তার উত্থান। সেখান থেকেই তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন সংখ্যালঘু শক্তিমান শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। সেই তুলনারহিত সংগ্রাম তাকে দাঁড় করিয়েছে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শ্রদ্ধাস্পদ অন্যতম এক নেতা হিসেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ৩০ বছরের সংগ্রামের পরে দেশটিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা ধীরে ধীরে নমনীয় হতে শুরু করলে দেশ পুনর্গঠন ও ক্ষমা ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও বিলম্ব করেননি মহান এই নেতা।
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে প্রথম নির্বাচনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
দীর্ঘদিন ধরেই নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন ম্যান্ডেলা। জীবনের শেষদিনগুলোতে সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন তিনি। ৫ ডিসেম্বর জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।
No comments