আইনশৃঙ্খলার ‘সাফল্যজনক অগ্রগতি’? আট দিনে ৫০টি প্রাণ
রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে দেশে যা হচ্ছে, তা দুর্বৃত্তপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও বর্বরতায় দেশবাসী যখন বিক্ষুব্ধ, হতবাক, তখন সরকারের একজন মন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘সাফল্যজনক অগ্রগতি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে কার্যত দেশবাসীর সঙ্গে তামাশাই করলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে গত বুধবার ভূমি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর এই মন্তব্যের দিনই সহিংসতায় সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছে নয়জন। এটা ঠিক যে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচির সময় ঘটে যাওয়া এসব দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ বিরোধী দল যতই অস্বীকার করুক, যেসব নৃশংসতা ও বর্বরতা ঘটেছে, এর দায় তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। কিন্তু এসব ঠেকানোর দায় সরকার কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। সরকার হয়তো চেষ্টা করেও তা বন্ধ করতে পারছে না, কিন্তু তাই বলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করার সুযোগ কই!
দেশে সম্প্রতি বিরোধী দলের দুই দফা অবরোধ কর্মসূচি পালিত হলো। এ সময় প্রাণ হারিয়েছে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ। নাটবল্টু খুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেন লাইনচ্যুত করা হচ্ছে, এতে মানুষ মরছে। যানবাহনে হামলা হচ্ছে, আগুন দেওয়া হচ্ছে, বোমা মারা হচ্ছে, এসব ঘটনায় মানুষ মরছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে এবং রাস্তা কেটে যোগাযোগ বন্ধ করার ঘটনাও ঘটেছে। আট দিনে ১৯ জেলায় সহিংসতায় ৫০ জনের মৃত্যু কি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে? মন্ত্রী শুধু এই মন্তব্য করেই ক্ষান্ত থাকেননি, তিনি গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেছেন, মিডিয়া প্রকৃত চিত্র তুলে না ধরে মাত্র কিছুসংখ্যক গাড়ি পোড়ানোর চিত্র তুলে ধরছে। বিষয়টি কি আসলেই তাই?
রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের মানুষ চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে। কারণ, দেশের সাধারণ মানুষই এর শিকার হচ্ছে। পুড়ে মানুষ মরছে, মরছে মাথায় ককটেল ফুটে। এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন জনগণকে আশ্বস্ত এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিই সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত। সেদিকে মনোযোগী না হয়ে সরকার একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির অসত্য দাবি করছে, অন্যদিকে গণমাধ্যমের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।
বাস্তবতাকে অস্বীকার করা কাজের কথা নয়। সরকারকে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আন্দোলনের নামে
এই দুর্বৃত্তপনা ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে, দেশে রাজনৈতিক যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে,
সেটাকে অন্য কোনো পথে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
No comments