অচ্ছুত সামন্ত ওডিশার বিস্ময় by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

কোনার্কের সূর্যমন্দির কিংবা চিলকা হ্রদ। ওডিশার (যার পুরোনো নাম উড়িষ্যা) এই দুই বিস্ময়ের কথা আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন। এবার পরিচিত হোন ওডিশার এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। যাঁর নাম অচ্ছুত সামন্ত। সত্যি বলতে কি; সূর্যমন্দির দেখেছি, চিলকা হ্রদ দেখেছি, পুরি সৈকত দেখেছি।


কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে গত মাসের ওডিশা সফরের উজ্জ্বলতম অভিজ্ঞতা অচ্ছুত সামন্ত নামের মানুষটি, যিনি তাঁর ঘামে ও শ্রমে গড়েছেন অসাধারণ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি বা কিট) ও কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কেআইএসএস বা কিস)। একার চেষ্টায় হোটেল হয়, কলকারখানা হয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও হয়। কিন্তু বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়? তাও আবার ওডিশার মতো রাজ্যে। বিস্ময়কর তো বটেই।
তবে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি নামের বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আসলে অচ্ছুত সামন্তকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি, সেটি কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স এবং এর ১৫ হাজার আদিবাসী ছাত্রছাত্রী। পদ্ম বিভূষণ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী এর নাম দিয়েছেন ‘ভারত তীর্থ’।
ভারতের ওডিশার জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ আদিবাসী। এই আদিবাসীদের একটি বড় অংশই এখনো মৌলিক অধিকারবঞ্চিত।
অসহনীয় দারিদ্র্যই আদিবাসী কিশোর-তরুণদের টেনে নিয়ে যায় বিপথে। অনেকেই জড়িয়ে পড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে। অচ্ছুত সামন্ত দাঁড়িয়েছেন এই পিছিয়ে থাকা আদিবাসী শিশুদেরই পাশে। ১৯৯৩ সালে মাত্র ১২৫ জন আদিবাসী ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন সেটি ডালপালা মেলে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসিক আদিবাসী বিদ্যাপীঠে। এই মুহূর্তে কিস-এ পড়ালেখা করছে ১৫ হাজারের বেশি আদিবাসী ছাত্রছাত্রী।
প্রথম শ্রেণী থেকে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়। এখানে পড়ার সুযোগ আছে একদম স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত। তাঁদের ভাষায় ‘কেজি টু পিজি’। এখানকার সবাই লেখাপড়ার সুযোগ পায় একদম বিনা মূল্যে। শুধু পড়ালেখা নয়, কিস-এর সব ছাত্রছাত্রীর জন্য থাকা, খাওয়া, বিনোদন, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুই ফ্রি। কম্পিউটার ল্যাব, কনফারেন্স ল্যাব, ওয়াই-ফাই সিস্টেম—কোনো কিছুরই অভাব নেই এখানে। একটু সহযোগিতা পেলে, সত্যিকার ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে পেলে মানুষ কী না করতে পারে? সেটাই আরও একবার হাতেনাতে প্রমাণ করেছে কিস-এর পড়ুয়ারা। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল নয়, তারা সর্বভারতের জন্য বয়ে এনেছে গৌরব। ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৩ আন্তর্জাতিক রাগবি টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স রাগবি টিম। ভারতের রাগবি জাতীয় দলে নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করছে এখানকার মেয়েরা। ভারতের জাতীয় পর্যায়ে ওদের অংশগ্রহণ আছে কাবাডি, সফটবল, ভলিবল ইত্যাদি খেলাতেও।
বিস্ময়কর? হ্যাঁ, বিস্ময়কর তো বটেই। তবে তার চেয়েও বিস্ময়কর লাগবে যখন আমরা জানব দুটো প্রতিষ্ঠানই অচ্ছুত সামন্ত দাঁড় করিয়েছেন স্রেফ একক চেষ্টায়। এই অসামান্য কাজ মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তাঁকে এনে দিয়েছে অজস্র সম্মাননা। যেকোনো রকমের রাজনীতি বা দলাদলি থেকে ‘শত হস্ত’ দূরে থেকেও তিনি হয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিচারে ‘আইকন অব ওডিশা’ (২০১১)। সর্বভারতে সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার রেকর্ড তাঁর দখলে। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারত থেকে তো বটেই, স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ থেকে। সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার হানসিওসহ ভারতের বাইরের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। পুরো তালিকাটা আরও দীর্ঘ। এসব তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেটে, উইকিপিডিয়ায় গেলেই মেলে। কিন্তু অচ্ছুত সামন্ত মানুষটা আদতে কেমন? কী এমন জাদুবলে তিনি সম্ভব করলেন এমন অসম্ভবকে? উত্তর পেতে হলে যেতে হবে ওডিশার ভুবনেশ্বরে, ‘সিয়িং ইজ বিলিভিং’।
অচ্ছুত সামন্তর দক্ষিণ হস্ত, কিট-এর অন্যতম পরিচালক মহেন্দ্র প্রসাদের তরফ থেকে নিমন্ত্রণ আসার পর থেকেই দিন গুনছিলাম। কিট বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য—বার্ষিক সমাপনী অনুষ্ঠানে তাঁরা আমন্ত্রণ জানান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালাম থেকে শুরু করে রিচার্ড এল আর্নেস্টের মতো নোবেল বিজয়ী রসায়নবিদ, কিংবা বলিউড তারকা। বহু নামজাদা ব্যক্তিত্ব নানা উপলক্ষে অতিথি হয়ে এসেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এবার তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড জয়ী প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে।

ভুবনেশ্বরের ডাক
জেট এয়ারওয়েজের বিমানে ঢাকা থেকে কলকাতা নেতাজি বিমানবন্দর। সেখান থেকে দ্বিতীয় দফায় উড়াল। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের চাকা যখন মাটি ছুঁল, তখন রাত নেমেছে ভুবনেশ্বরে। বিমানবন্দরে অতিথিদের স্বাগত জানাতে আগেভাগেই হাজির মহেন্দ্র প্রসাদ।
পরদিন সকাল সকাল সামন্তজি সন্দর্শনে যাত্রা। তার আগে কিট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পালা। পথপ্রদর্শক হিসেবে সঙ্গী সহকারী লিয়াজোঁ কর্মকর্তা চিত্তরঞ্জন পান্ডা। পথে নেমেই জানা হয়ে গেল যানজট কী জিনিস, সেটি ভুবনেশ্বরের লোকজন জানে না। হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে লাগল মিনিট দশেক। কোথাও ভিড় নেই। হট্টগোল নেই।
‘ওই যে দেখুন, ওটা হচ্ছে স্থাপত্য বিভাগ। আর এই দিকে ফিল্ম ডিপার্টমেন্ট। আমাদের এখানে ছাত্রাবাসের নাম কিংস প্যালেস। আর ছাত্রী আবাসের নাম কুইন্স প্যালেস। পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট-সুবিধা আছে।’
বলতে বলতে গাড়ি ছোটে প্রকৌশলবিদ্যা বিভাগ ভবনের দিকে। ছাত্রাবাস আর বিভাগীয় ভবনগুলোর স্থাপত্যশৈলী সত্যিই চেয়ে দেখার মতো। কোনো কোনোটা আগাগোড়া কাচে মোড়া। গোটা ক্যাম্পাসে সবুজের অভাব নেই। রুচি আর আধুনিকতার ছাপ সবখানে। খেলার মাঠ, ভলিবল-বাস্কেটবল কোর্ট, টেনিস কোর্ট, স্টেডিয়াম (নির্মাণাধীন), সুইমিংপুল, এমনকি কম্পিউটারাইজড রেলওয়ে টিকিট রিজার্ভেশন সেন্টার—কী নেই এই ক্যাম্পাসে! আছে ১২০০ শয্যার একটি হাসপাতাল এবং পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। এই হাসপাতালে শুধু এখানকার ছাত্রছাত্রী নয়, যে কেউ চিকিৎসাসেবা পেতে পারে বিনা মূল্যে। শুধু বড়সড় অস্ত্রোপচার হলেই রোগীকে কিছু বিল পরিশোধ করতে হয়।
কিট-এর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১৭ হাজার। পুরোপুরি বিশ্বমানের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের সংখ্যাও ১৭। এরই মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় নাম উঠিয়ে ফেলেছে লিমকা বুক অব রেকর্ডসে (গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ভারতীয় সংস্করণ)। ভারতে সবচেয়ে কম সময়ে ‘ডিমড’ স্ট্যাটাস পাওয়ার গৌরব ওডিশার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

সামন্তজির কদমতলায়
কিট ছাড়িয়ে গাড়ি ছুটেছে কিস-এর পথে। ওখানেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন সামন্তজি। গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই গাঁদা ফুলের মালা হাতে এগিয়ে এলেন একজন। পরনে নীল জিনসের প্যান্ট। পায়ে চপ্পল। সাদা শার্ট। বিনয়ী ভঙ্গি। মুখে শিশুর সারল্য। আর ভুবন ভোলানো হাসি। হ্যাঁ, অচ্ছুত সামন্ত স্বয়ং হাজির সামনে! স্থানীয় ঐতিহ্যমাফিক গাঁদা ফুলের মালা নিজেই পরিয়ে দিলেন অতিথিদের গলায়। তখন দুপুর। কিস-এর ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ার সময় হয়েছে। দেখলাম আদিবাসী কচি-কাঁচার দল চলেছে ভোজনকক্ষের দিকে। সবার হাতে বিশুদ্ধ পানির বোতল (কিস-এর নিজস্ব প্ল্যান্টে উৎপাদিত), নিজের থালা। সবার পরনে আকাশি-গোলাপি রঙা স্কুলের পোশাক। দেখার মতো দৃশ্য। ভোজনকক্ষের ভেতর ঢুকে চোখে পড়ল আরও এক এলাহি কারবার। বিশাল হলঘরে স্টিলের থালা নিয়ে সারি বেঁধে বসে পড়েছে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা। ১০ হাজার ধারণক্ষমতার এই বিশাল হলঘরে কিস-এর ১৫ হাজার ছেলেমেয়ে প্রতিবেলা খাওয়া-দাওয়া করে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয় না। ছোটরা খাওয়ার পর বসবে বড়রা। এটাই নিয়ম।
কিস-এ পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ালেখার সঙ্গে সঙ্গে পায় কারিগরি প্রশিক্ষণ। কম্পিউটার চালনা, সেলাই, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের। আর এসব কাজ থেকে অর্জিত অর্থের একাংশ সঞ্চিত হয় ওদের জন্য।
দোতলা ঘরে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ চলছিল একদল ছেলেমেয়ের।
হাতের ক্যামেরা দেখে একগাল হাসল দুটো ছোট্ট আদিবাসী মেয়ে।
তোমার নাম কী?
‘সাবিত্রী।’ হাসিমুখে বেশ অনেকক্ষণ চুপ থেকে তিন-চারবার সহপাঠিনীর সঙ্গে চোখাচোখির পর অবশেষে বলল মেয়েটা।
তুমি ক্লাস টুতে পড়ো?
‘আইজ্ঞা।’
এবারে সহপাঠিনীকে প্রশ্ন, তোমার নাম?
‘পানি রানী।’
দুজন একই ক্লাসে?
‘আইজ্ঞা।’
উড়িয়া ভাষায় ‘আইজ্ঞা’ মানে হ্যাঁ বা জি। পাশের ঘরে চলছিল সেলাই প্রশিক্ষণ। ওদের কেউই বাংলা বোঝে না। ইংরেজিতেও দখল অতি সামান্য। অগত্যা দোভাষী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলেন চিত্তরঞ্জন পান্ডা। সাহস করে কথা বলতে এগিয়ে এল যে শ্যামল বরণ আদিবাসী ছেলেটি, তার নাম সুনীল মরমু। পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে।
‘বাড়ি কোঠে?’ পান্ডা তাকে জিজ্ঞেস করে। সুনীল জানায় ময়ুরভঞ্জ থেকে এখানে পড়তে এসেছে সে। স্কুলে কী কী ভালো লাগে?
‘সেলাইয়ের কাজ ভালো লাগে। শার্ট বানাই। প্যান্ট বানাই। এসব ভালো লাগে।’
কিস ক্যাম্পাস ঘোরাঘুরি মোটামুটি শেষ। সামন্তজির অনুরোধ, ‘চলুন, আমার অফিসে গিয়ে বসি।’ সামন্তজির অফিস, নিশ্চয়ই সেটাও দেখার মতো কিছু হবে। আমরা আগ্রহ নিয়ে এগোই। তখনো জানি না আমাদের জন্য আরও একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছে। সামন্তজি এগিয়ে গিয়ে বসলেন একটা কদমগাছের তলায়। একটা ছোট টেবিলের মতো আছে সেখানে। আর আছে গোটা পাঁচেক প্লাস্টিকের চেয়ার।
‘এটাই আমার অফিস।’ একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন অচ্ছুত সামন্ত। বটে! সামন্তজি হাসিখুশি মানুষ। রসিকতা তো করতেই পারেন। পাশ থেকে ফিসফিস করে মহেন্দ্র প্রসাদ চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করলেন। রসিকতা নয়, সত্যি সত্যি এটাই সামন্তজির অফিস। কাজকর্মে যাঁরাই দেখা করতে আসেন, সবার সঙ্গে এই কদমতলাতেই আলাপ-সাক্ষাৎ সারেন সামন্তজি। কিট এবং কিস-এর কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থকড়ির ব্যাপার আছে। অথচ সামন্তজি এমনকি কোনো চেক সই করার ক্ষমতাটাও নিজের হাতে রাখেননি। তিনি পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী। আন্তর্জাতিক মানের দুটো সুবিশাল প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হয়েও নিজে থাকেন একটা ছিমছাম দোতলা ভাড়াবাড়িতে। বিয়ে-থা করেননি। পুরোদস্তুর নিরামিষভোজী তিনি।
এ প্রসঙ্গে তাঁকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত জন ক্রিচের লেখার উদাহরণ টানা যেতে পারে। সেখানে অচ্ছুত সামন্ত সম্পর্কে ক্রিচ লিখেছেন, ‘ইন দ্য ম্যানার অব অল গুরুজ, অচ্ছুত সামন্ত ইজ কাম অ্যান্ড বিআটিফিক। ড্রেসড ইন ব্লু জিনস অ্যান্ড স্যান্ডেলস, সিমিং টু একম্পলিশ এভরিথিং বাই ডুয়িং নাথিং।’ (টাইম, নভেম্বর, ৭, ২০১১)
এর বাংলা হতে পারে এ রকম—‘অন্য সব গুরুর মতোই অচ্ছুত সামন্ত শান্ত এবং সুখী। নীল জিনস আর স্যান্ডেল পরিহিত এই মানুষটাকে দেখে মনে হতে পারে তিনি সব কাজই সফলভাবে করে যাচ্ছেন, আদতে ‘কোনো কিছু না করেই’।
টাইম সাময়িকীতে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ, বয়স ৫০ ছোঁয়ার আগেই এতসব বিপুল কর্মকাণ্ড আর অর্জন, বিস্ময়কর লাগতেই পারে। তবে বিস্ময়ের মাত্রা আকাশ ছোঁবে যখন আমরা জানতে পারব এই মানুষটি উঠে এসেছেন ওডিশার এক হতদরিদ্র পরিবার থেকে। বাবা অনাদি চরণ সামন্ত করতেন কারখানার ছোট চাকরি। মা নীলিমা রানী করতেন ঘরের কাজ। এই পরিবারটির পথে বসার উপক্রম হয় যখন আচমকা এক ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বর্গবাসী হন অনাদি চরণ।
ঋণ আর ধারদেনায় ডুবে গিয়ে অচ্ছুত সামন্ত এমনকি আত্মহননের কথাও ভেবেছিলেন। তারপর? সেখান থেকে কীভাবে উঠে এলেন তিনি? সে প্রশ্নের উত্তর জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম অচ্ছুত সামন্তের। ভাষা হিসেবে উড়িয়া ও বাংলার মধ্যে অনেক মিল। টানটা একটু অন্য রকম হলেও সামন্তজি মোটামুটি বাংলা বলতে পারেন এবং বোঝেন বেশ ভালো। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি—দুই ভাষাতেই।

No comments

Powered by Blogger.