প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর সংসদে বিলুপ্ত হলো কর ন্যায়পাল

ছয় বছর পর আইন পাস করে কর ন্যায়পাল বিলুপ্ত করে দেওয়া হলো। বিগত বিএনপি সরকারের শেষ দিকে ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে আইন করে দেশে কর ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
ওই সময় কর ন্যায়পাল বিল পাসের প্রস্তাব করে বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান বলেছিলেন, কর ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ কর নিয়ে বিদ্যমান ভীতি থেকে রক্ষা পাবে। মানুষ আরও বেশি করে কর দিতে উৎসাহিত হবে। কর আদায়ে হয়রানি রোধেও কর ন্যায়পাল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে ওই সময় পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছিল।
এর ছয় বছর পর গতকাল বুধবার সংসদে কর ন্যায়পাল (রহিতকরণ) বিল, ২০১১ পাসের মাধ্যমে কর ন্যায়পাল পদ এবং এর সব কার্যক্রম রহিত করা হয়।
বিলটি পাসের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কর ন্যায়পাল কার্যালয়টি কর প্রশাসনের অপশাসন দূর করার পরিবর্তে একটি ব্যয়সাধ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি অথর্ব ও ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার কর আদায়ে মানুষকে নানাভাবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়ায় এ ধরনের ব্যয়সাধ্য প্রতিষ্ঠানের আর প্রয়োজন নেই।
বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ সময় বিরোধী দল বিএনপির সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন।
কাকরাইলে কর ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। এই কার্যালয়ে ২০০৬ সালে ১০টি, ২০০৭ সালে ১১৯টি, ২০০৮ সালে ২৪১টি ও ২০০৯ সালে ৩৫৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এসব অভিযোগ সম্পর্কে কর ন্যায়পালের সর্বশেষ প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিবেচনায় নেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও সংশোধনীর প্রস্তাব আনেন একমাত্র স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিম। পরে এগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
কর ন্যায়পাল বিল পাসের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগে মানুষ আয়কর বিভাগকে দেখে ভয় পেত। ভয়ে তারা কর দিতে কর অফিসে বা কর কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না। কিন্তু বর্তমান সরকার গত দুই বছরে করমেলাসহ বিভিন্নভাবে মানুষকে কর সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে সম্ভব হয়েছে। আর এর সুফল হিসেবে গত দুই বছরে দুই লাখ করদাতা বেড়েছে।
বিলটিতে বলা হয়, কর ন্যায়পাল কার্যালয়ের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও গচ্ছিত অর্থ এবং অন্য সব সম্পদ, দলিল-দস্তাবেজ ইত্যাদি সরকারের অনুকূলে ন্যস্ত হবে। কর ন্যায়পাল কার্যালয়ের সব দায়দেনা সরকারের ওপর বর্তাবে। কার্যালয়ের অধীনে সব অনিষ্পন্ন অভিযোগ, তদন্ত ও সাক্ষ্য বাতিল হবে। আর কর ন্যায়পাল কার্যালয়ে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মরত কর্মচারীরা বিধি মোতাবেক আত্তীকৃত হবেন।
এর আগে গত ১৪ মার্চ এই বিলটি সংসদে আনেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটির সুপারিশ অনুসারেই গতকাল বিলটি পাস করা হয়।
তবে কর ন্যায়পাল খায়রুজ্জামান চৌধুরীরও মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বছরই কর ন্যায়পাল কার্যালয় কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.