পেলেকে ছোঁয়ার পথে নেইমারের এক ধাপ?

তাঁকে বলা হয় ‘নতুন পেলে’। পেলে তো এমন এক শৃঙ্গ, এভারেস্টের চেয়েও যাঁর উচ্চতা বেশি। সেটি নেইমার ছুঁতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আজ পেলের এক কীর্তি ছোঁয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারেন সান্তোসের এই তারকা স্ট্রাইকার। আজ উরুগুয়ের ক্লাব পেনারলের বিপক্ষে কোপা লিবার্তাদোরেস ফাইনালের প্রথম লেগ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে সান্তোসকে কেউ হিসাবের মধ্যেই ধরেনি, নেইমার-জাদুতে তারাই এখন আধাশতাব্দী পর শিরোপা জয়ের সামনে। প্রথম লেগে নেইমার কি জাদুকরি কিছু করতে পেরেছেন?
ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়ে গেছে। হয়তো এতক্ষণে শেষও হয়ে গেছে। ফিরতি লেগ ২২ জুন, সেটি সাও পাওলোতে। দেখা যাক, সান্তোসকে তৃতীয় শিরোপাটি নেইমার এনে দিতে পারেন কি না।
দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ কোপা লিবার্তাদোরেস সান্তোস জিতেছে মাত্র দুবার। ১৯৬২ আর ১৯৬৩ সালে, ষাটের দশকে সান্তোসের স্বর্ণযুগে। পেলে-পরবর্তী যুগে শিরোপা তো দূরের কথা, টুর্নামেন্টের ফাইনালেই উঠতে পেরেছে মাত্র একবার (২০০৩ সালে)। এবার পেনারলের বিপক্ষে খেলা পড়ায় ফাইনালটি নিয়ে বাড়তি আগ্রহও তৈরি হয়েছে। উরুগুয়ে-ব্রাজিলের ফুটবল রেষারেষি তো আর নতুন নয়!
১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে কোপা লিবার্তাদোরেস জেতার পর পেনারল টানা তৃতীয় শিরোপার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পথে বাদ সাধে পেলের সান্তোস। ইতিহাসের কারণেই দুই দল মানেই ক্লাসিক দ্বৈরথের নিশ্চয়তা। তা ছাড়া উরুগুয়ের সবচেয়ে সফল দল পেনারলও ১৯৮৭ সালের পর প্রথম এই শিরোপা জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে।
অপেক্ষাটা অবশ্য সান্তোসেরই বেশি তীব্র হওয়ার কথা। প্রায় আধাশতাব্দী, ঠিকঠাক হিসাব করলে ৪৮ বছর পরে আরও একবার কোপা লিবার্তাদোরেস জেতার সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে পেলের কারণেই বিখ্যাত এই ক্লাব। ৫ গোল করে ১৯ বছর বয়সী নেইমারই এই অগ্রযাত্রায় রেখেছেন মুখ্য ভূমিকা। নেইমার আবার ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন, সান্তোসে খেলেই লিওনেল মেসিকে ছাপিয়ে যেতে চান। জিততে চান ফিফা-ব্যালন ডি’অর। এই তো সুযোগ তাঁর জন্য।
সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় ম্যাচটি খেলার আগে নেইমারদের অনুপ্রাণিত করতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন খোদ পেলেই। জীবন্ত কিংবদন্তি নিজে গিয়ে খেলোয়াড়দের প্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন। বলেছেন, ‘আমি সান্তোসকে ভালোবাসি। আমি চাই, ওরা চ্যাম্পিয়ন হোক।’ কিন্তু এও বলেছেন, এই ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা মানে ঝুঁকি, ‘এটা এমন একটা ম্যাচ, যেখানে কোনো ফেবারিট নেই। এখানে আছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা।’
অনিশ্চয়তা যত বেশি থাকবে, ম্যাচ নিয়ে রোমাঞ্চ থাকবে তত বেশি; জমে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে তত বেশি নাটক। আর সেই রঙ্গমঞ্চের কেন্দ্রীয় চরিত্রে নেইমার থাকবেন কি না, সেটি বলে দেবে সময়। তবে পেলে নেইমারকে উজ্জীবিত করার দারুণ এক অস্ত্র খুঁজে বের করেছেন। সবাই বলছে, নেইমারই নাকি ষাট-সত্তর দশকের পেলে, এবার পেলে তাঁর পুরোনো এক ছবি নিয়ে হাজির। যে ছবিতে পেলের চুলের কাটিংটা ঠিক এখনকার নেইমারের মতো ছিল। উহু, ভুল বলা হলো। এখনকার নেইমারের চুলের কাটিং ঠিক সেই সময়ের পেলের মতো। তবে নেইমার ভালো করেই জানেন, চুলের কাটিংয়ের মিলটাই শেষ কথা নয়; মাঠের খেলাটাই আসল!

No comments

Powered by Blogger.