রহমতগঞ্জ যখন বাফুফের কাঠগড়ায়

‘৫টা গোল খেয়েছি। এসব ব্যাপারে তারা আমার কাছে জানতে চেয়েছে। গোলের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছে। সবাই আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করছিল। এমনকি আমাকে দিয়ে কোরআন শরিফও ধরানো হয়েছে। আমার কাছে সত্য কথা জানতে চেয়েছে, আমি সত্য কথা বলেছি।’
রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক ইরান শেখ একনিঃশ্বাসে বলে গেলেন। গত শনিবার বাংলাদেশ লিগে শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচের তদন্তে নামা বাংলাদেশ লিগ কমিটির সামনে কাল সন্ধ্যায় জবানবন্দি দিয়েছেন আলোচিত এই গোলরক্ষক।
‘প্রথম ২০-২৫ মিনিট আমরা ভালো খেলেছি। কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড় মাইকেল দুম্বা আহত ও শিমুল লাল কার্ড খাওয়ার পর আমাদের রক্ষণ ছিল না বললেই চলে। তাই আমরা এতগুলো গোল খেয়েছি’—কমিটির সামনে এভাবেই দুই গোল দিয়ে পাঁচ গোল খাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইরান।
গত পরশু রহমতগঞ্জ কমিটির ডাকে সাড়া না দেওয়ায় বাফুফে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। রহমতগঞ্জের পুরো দল কাল নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই বাফুফে ভবনে হাজির।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে পাতানো খেলার অভিযোগ ওঠার পর কোনো দলকে তদন্ত কমিটির সামনে দাঁড় করানোর ঘটনা এটিই প্রথম। শেখ জামাল-রহমতগঞ্জ ম্যাচ আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও অতীতের সব পাতানো ম্যাচের বিচারের দাবিও উঠছে। কিন্তু সেটি নিয়ে লিগ কমিটি আপাতত কিছু ভাবছে না। এ বছর লিগের কয়েকটি ম্যাচ নিয়েই তারা তদন্ত করবে। আগামী পরশু ডাকা হবে শেখ জামালকে। তারপর আরও কয়েকটি দলকেও, যাদের নাম অবশ্য প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ লিগ কমিটি।
কাল রহমতগঞ্জের ফুটবল সম্পাদক সালাউদ্দিন কালাকে রুদ্ধদ্বার কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। তারপর একে একে গোলরক্ষক ইরান শেখ, কোচ আলী আসগর নাসির, ডিফেন্ডার মাইকেল দুম্বা, লেফটব্যাক রনি ও সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানকে। সবশেষে সব খেলোয়াড়কে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদির কক্ষে নিয়ে ম্যাচের ৭টি গোল বড় পর্দায় দেখানো হয়।
কমিটির সামনে রহমতঞ্জের সবারই অভিন্ন বক্তব্য ছিল, ‘আমরা পাতানো ম্যাচ খেলিনি।’ তবে লিগ কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলগুলোর ভিডিও দেখানোর পর এই দাবি নাকি আর ততটা জোরালো থাকেনি।
সূত্র আরও জানিয়েছে, রহমতঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ম্যাচ দেখে বলেছেন, তাঁদের সন্দেহ হয়েছে কোনো খেলোয়াড় এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত করে তাঁরা এটা বের করবেন। গোটা প্রক্রিয়ার আগে-পরে রহমতঞ্জের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেছেন, ‘এভাবে কমিটির সামনে আসা আমাদের জন্য চরম বিব্রতকর।’
লিগ কমিটির সভাপতি সালাম মুর্শেদি ‘তদন্তের স্বার্থে’ সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তাঁর কথা, ‘আমাদের এক জায়গা থেকে শুরু করতেই হবে। ৪০ বছর পর দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, অবশ্যই পাতানো খেলার শাস্তি হওয়া দরকার।’
বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ফেডারেশনেই ছিলেন। রাত পৌনে নয়টায় ভবন ছেড়ে যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘কমিটি কী করছে, আমি খবরই রাখছি না। তাদের বলে দিয়েছি, যেটা ভালো হয়, ফুটবলের স্বার্থে সেটিই যেন করা হয়। আমি হস্তক্ষেপ করব না। আমরা চাই, পাতানো খেলা বন্ধ হোক।’
লিগ কমিটির সভায় সভাপতি সালাম মুর্শেদি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হারুনুর রশিদ, আনোয়ারুল হক হেলাল, হাসানুজ্জামান বাবলু ও গোলাম রব্বানী। রাত সাড়ে ৯টায় তাঁদের আড্ডায় ভেসে বেড়াল কয়েকটি মন্তব্য—‘পাতানো খেলা আজকের সমস্যা নয়। এবার ছাড় দিলে কোনো দিন এ দেশে পাতানো খেলা বন্ধ হবে না।’
দেরিতে হলেও বোধোদয় হয়েছে, এটাই বা কম কী!

No comments

Powered by Blogger.