সাকিব আল হাসান লিখছেন প্রথম আলোয়-সুখের কান্না কাঁদতে চেয়েছিলাম

মানুষ কান্না দেখে ফেললে লজ্জা লাগে। আমার কান্নার খবর তাই কেউ জানে না। আজ একটা গোপন কথা বলি। জীবনে ক্রিকেটের জন্য যতবার কেঁদেছি, মনে হয় না আর সব কারণ মিলিয়েও ততবার চোখে পানি এসেছে। ক্রিকেটের কারণেও যে কয়বার কেঁদেছি, কেউ দেখেনি। কিন্তু এবার আর লুকিয়ে রাখা গেল না চোখের জল।

কান্না অবধারিতই ছিল। ফাইনালটা এমন এক ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে জিতলেও চোখে পানি আসত। আমরা সুখের কান্নাই কাঁদতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাঁদলাম ম্যাচ হেরে!
কাল প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হওয়া আমার কান্নার ছবি বারবারই ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ফাইনাল ম্যাচে। খারাপ লেগেছে। সারা দিনই এই নিয়ে আলোচনা শুনেছি। অনেকে বলেছে, ওভাবে কাঁদলাম কেন? আমার সঙ্গে নাকি তা যায় না। আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা তো নেই। ভেতরে কী হচ্ছিল, কেবল তখনই বুঝতে পারছিলাম।
এশিয়া কাপটা শেষ পর্যন্ত কষ্টেরই হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা দিয়ে আমরা শুরুটা করেছিলাম ইতিবাচক। ম্যাচটা হারলেও অনেক কিছু শিখেছি—এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, পরের ম্যাচগুলো জিততে হলে কী করতে হবে, কী করলে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারব। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা সত্যি সত্যি সেগুলো কাজে লাগাতে পেরেছি। শেষ ম্যাচেও সবই পেরেছি, কিন্তু কোনো কারণে ফলটা পক্ষে আসেনি। তবে আমরা এই ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে।
এশিয়া কাপের শুরুতে কিন্তু আমরা ভাবিইনি ফাইনালে যাব। প্রথম ম্যাচটার লড়াই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, দলের চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছে।্রএখন গভীরভাবে বিশ্বাস করি, বড় দলের বিপক্ষে চাইলে আমরা যেকোনো কিছু করতে পারি।
প্রত্যাশার চাপ হয়তো ছিল। কিন্তু চাপটা আমরা সেভাবে নিইনি। মাথায় একটা জিনিসই কাজ করেছে—পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খুব ভালো খেলেও জিততে পারিনি। এই ম্যাচটা যেভাবেই হোক, জিততে হবে। আগের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেছি। এ ম্যাচেও সুযোগ তৈরি করব। কিন্তু হাতছাড়া করব না।
আমরা ফাইনাল খুব কম খেলেছি। ‘ফাইনাল’ শব্দটাই একটা বিরাট ব্যাপার আমাদের জন্য। নতুনদের ওপর সেই চাপ একটু ছিল হয়তো, তবে সেটা বড় হয়ে ওঠেনি। দিন শেষে আমরা হেরে গেছি, এটাই সত্যি।
হারার কারণ হিসেবে চাপ ছাড়া আরও অনেক কিছুই আলোচনায় আসছে। এটা হয়নি, ওখানে ওটা হয়নি। আসলে হারের ব্যবধান তো খুবই কম—মাত্র ২ রানের! কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। কথার কথা, আমি ৬৮ রানের জায়গায় ৭০ করলেও কিন্তু হয়ে যায়। দলের প্রত্যেকেই এ রকম ভাবছে। ভাবছে, ‘আমার জন্যই বুঝি হলো না।’
কিন্তু আমার মনে হয় না, এসবের কোনোটাই হারের কারণ। শাহাদাত পুরোনো বলে ভালো করে। অনেক দিন ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে স্লগ ওভারে ভালো করছে। আগের তিন ম্যাচেও ভালো করেছে। রান একটু বেশি দিলেও স্লগ ওভারে একজন বোলার ৬-৭ রান করে দিতেই পারে।্রতা ছাড়া ফাইনালের শেষ ওভার বাদে বাকি ওভারগুলোতে ভালো বোলিংই করেছে শাহাদাত। ওর বোলিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠা ঠিক নয়।
নাজিম ভাইয়ের ব্যাটিং নিয়েও অনেকে বলছেন। আসলে উনার ব্যাটিং নিয়ে আমাদের চিন্তাই ছিল না। রান কত হচ্ছিল, সেটাই বড় কথা। তামিম খুবই ভালো খেলছিল। নাজিম ভাই রান না করলেও তাঁর উইকেটে থাকাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল। হয়তো নিজের মতো করে খেলতে পারছিলেন না, তবে দলের জন্য ওই মুহূর্তে সমস্যা মনে হয়নি তাঁর ব্যাটিং। একই ব্যাপার নাসিরের ক্ষেত্রেও। প্রতিদিনই ভালো ব্যাট করেছে, কিন্তু এদিন পারেনি। তার পরও ওর আর আমার জুটিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রান কম করলেও নাসিরের উইকেটে থাকাটা দরকার ছিল তখন।
এত কাছে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারাটা কষ্টের। তবে হতাশায় ভেঙে পড়িনি আমরা। সবাই বুঝতে পারছি, এ অর্জনও কম নয়। দিন শেষে বড় আয়নায় দেখলে আমাদের পারফরম্যান্স সবাই ইতিবাচকভাবেই নেবে।
তবে এশিয়া কাপে আমি নিজের পারফরম্যান্সে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। বলতে পারেন, ফিফটি-ফিফটি। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক থাকলেও বোলিংয়ে নিজের সেরা পারফরম্যান্সের কাছাকাছিও করিনি। কিছু উইকেট পেয়েছি, তবে আমার মনে হয়, বল হাতে ৫০-৬০ ভাগের বেশি করতে পারিনি। আরও বেশি দিতে পারলে ভালো হতো। কারণ, দলের জন্য অবদান রাখতে পারাটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.