স্বাভাবিক হয়নি সংসদ সচিবালয় by কাজী সোহাগ

এখনো স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এখানে প্রায় ১২শ’ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। ৫ই আগস্টের পর কেউই আসছেন না সংসদ সচিবালয়ে। নেই হাজিরার সিস্টেমও। ভেতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসার চেয়ার, টেবিলও নেই। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে সংসদ ভবন। ভেতরের ফ্লোরগুলোতে অসংখ্য ফাইল আর কাগজে ভরা। বেশিরভাগ দরজা ও জানালা ভাঙা। সংসদে থাকা কয়েকশ’ কম্পিউটার ও ল্যাপটপের কোনো হদিশ নেই। ইন্টারনেট লাইন সম্পূর্ণ অকেজো।

এ অবস্থায় মেরামতেরও কোনো উদ্যোগ নেই। সংসদ সচিবালয়ের বেশ কয়েক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, সব ধরনের সিস্টেম একেবারে ভেঙে পড়েছে। তারা বলেন, সাংবিধানিকভাবে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু রুটিন ওয়ার্ক রয়েছে যা এখন করা সম্ভব হচ্ছে না। যারা কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন তারা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের জন্য কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি। সরকারি চাকরি হওয়ায় তারা নিজ উদ্যোগে কোনোকিছু করতেও পারছেন না। সম্প্রতি সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। তাই এ অবস্থায় সংসদ সচিবালয় চালানোর মতো কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত নেই। সবাই চেয়ে রয়েছেন সরকারের নির্দেশনার ওপর। যারা সংসদ এরিয়ায় বাসায় থাকতেন তাদের বেশিরভাগই বাসা ছেড়েছেন। কারণ সেখানে কোনো ধরনের আসবাবপত্র নেই। বেশিরভাগই বাসা ভাড়া করে আছেন অথবা নিকটাত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। সংসদ ভবন বা জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্স ঢাকার শেরে বাংলা নগরে ২১৫ একর জায়গার ওপর অবস্থিত। ৯ তলা বিশিষ্ট ভবনটির মূল স্থপতি লুই কান। তিনি প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি। বাংলাদেশের সংসদ ভবন উপমহাদেশের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন। এর স্থাপত্যশৈলী দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর ও ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। এ সময় তারা স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপদের কক্ষসহ ৯ তলা ভবনের প্রায় সব কক্ষ তছনছ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ই আগস্ট সংসদ ভবনের গেটে প্রথমে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রবেশে বাধা দিলেও লোকসমাগম বাড়লে আর তাদের আটকানো যায়নি। সংসদ ভবন চত্বরের দক্ষিণ প্লাজা, খেজুরবাগান মাঠ, টানেলে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ওইদিন বিকাল থেকে রাতভর একদল লুটেরা সংসদ ভবনের প্রায় সব কক্ষেই লুটপাট চালায়। তারা অনেকেই আবার সকালে তালা ভাঙার জিনিসপত্রসহ চলে আসে এবং কক্ষের তালা ভেঙে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান কাগজপত্র লুটপাট করে এবং কক্ষের সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা সংসদ ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে সংসদ ভবনে সেনাবাহিনী চলে আসে, সংসদ সচিবালয়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের সঙ্গে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে। তারা সচিবালয়ের কর্মচারী-কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাদের সহয়োগিতায় এগিয়ে আসে একদল ছাত্র, যারা লুটের মালপত্র ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানায় এবং কিছু জিনিসপত্র লুটেরাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সংসদের একটি কক্ষে রেখে দেয়।


No comments

Powered by Blogger.