বিশ্বে প্রথম ফুসফুস ক্যান্সারের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালু হলো সাত দেশে

বিশ্বের প্রথম mRNA ফুসফুসের ক্যান্সারের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু হলো। বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী এই ভ্যাকসিনের  হাজার হাজার জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর বহু মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে মারা যান। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় ফুসফুসের ক্যান্সারে । যাদের দেহে  টিউমার ছড়িয়ে পড়ে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে। এখন বিশেষজ্ঞরা একটি নতুন ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছেন যা শরীরের ভেতরে ক্যান্সার কোষগুলিকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করে এবং সেগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি রোগীর দেহে নতুন করে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও কমে যায়। BNT116 নামে পরিচিত এবং BioNTech দ্বারা তৈরি, এই ভ্যাকসিনটি নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার (NSCLC) নিরাময়ের জন্য তৈরী করা হয়েছে।

মানব দেহের ওপর BNT116  এর ফেজ ১ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের গবেষণা সাতটি দেশে ৩৪ টি গবেষণা সাইটে চালু হয়েছে: যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্পেন এবং তুরস্ক।যুক্তরাজ্যের ছয়টি সাইট ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অবস্থিত, যেখানে প্রথম যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার রোগীরা  ভ্যাকসিনের  প্রাথমিক ডোজ  গ্রহণ করেছেন।

সামগ্রিকভাবে প্রায় ১৩০ জন রোগীকে - সার্জারি বা রেডিওথেরাপির আগে  ইমিউনোথেরাপির পাশাপাশি ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য নথিভুক্ত করা হবে। প্রায় ২০ জন রোগী যুক্তরাজ্য থেকে ভ্যাকসিন পাবেন। এই ভ্যাকসিন Covid-19 - এর মতো মেসেঞ্জার আরএনএ  (mRNA) কে ব্যবহার করে, নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সারের কোষগুলিকে শনাক্ত করে তাদেরকে ধ্বংস করবে।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে। কেমোথেরাপির পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর কোষগুলিকে স্পর্শ না করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে  একজন ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতাকে  শক্তিশালী করাই এই গবেষণার লক্ষ্য। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হাসপাতাল NHS ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের (UCLH) পরামর্শক মেডিকেল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সিও মিং লি বলেছেন- ‘আমরা এখন ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এমআরএনএ-ভিত্তিক ইমিউনোথেরাপি ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছি এবং পরীক্ষার ফলাফলের আশায় আছি। এই প্রক্রিয়া  ক্যান্সার চিকিৎসার পরবর্তী বড় ধাপ।’ লন্ডনের ৬৭ বছর বয়সী জানুস রাক্স যুক্তরাজ্যতে ভ্যাকসিন পাওয়া প্রথম ব্যক্তি। মে মাসে তার রোগ ধরা পড়ে এবং তার পরেই কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি শুরু হয়। জানুস একজন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞ । ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চ ইউসিএলএইচ ক্লিনিকাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে পাঁচ মিনিট পরপর ছয়টি ইনজেকশন দেয়া হয় জানুসকে। প্রতিটি জ্যাবে আলাদা আলাদা আরএনএ স্ট্র্যান্ড রয়েছে। তিনি প্রথমে  টানা ছয় সপ্তাহ, এবং তারপর প্রতি তিন সপ্তাহ অন্তর ভ্যাকসিন পাবেন। গবেষক লি বলেছেন: " ৪০ বছর ধরে আমি ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করছি। আমরা আশা করি এই ভ্যাকসিন  ক্যান্সার ফিরে আসার পথ  বন্ধ করবে। সেইসাথে  ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীরা আরো কিছুদিন পৃথিবীতে থাকার সুযোগ পাবেন।'  রাক্স দ্রুত ক্যান্সার থেকে সেরে উঠে এখন লন্ডন ম্যারাথনে যোগ দেবার স্বপ্ন দেখছেন।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

No comments

Powered by Blogger.