কেন পশ্চিমা নারীবাদীদের কাছে ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
গত দশ মাসে, সহমর্মিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক পশ্চিমা নারীবাদী বিশেষ করে ব্রিটেনের নারীবাদী সংগঠনগুলোর দ্বিমুখী আচরণ প্রত্যক্ষ করা গেছে। পার্সটুডে'র মতে, ইসরাইলি নারীদের প্রতি সমর্থনে এই নারীবাদীদের কাছ থেকে অসংখ্য দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও,ফিলিস্তিনি নারীদের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে রহস্যজনকভাবে তারা নীরবতা রয়েছে।
ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনি নারীদের উপর ব্যাপক যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও এদিকে কারো কোনো নজর নেই। অথচ ফিলিস্তিনি নারীদের দুরবস্থার প্রতি এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার উচিত ছিল।
৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত শত শত ফিলিস্তিনি নারীকে ইসরাইল আটক করেছে এবং তাদের ওপর যৌন নির্যাতন, নগ্ন করে শারিরিক নির্যাতন, ধর্ষণের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে। এর মধ্যে দুটি ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পশ্চিমা নারীবাদীরা চোখ বন্ধ করে রেখেছে
চলতি বছর ১৯ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত যৌন নিপীড়নের দুটি ঘটনাকে উপেক্ষা করা হলেও প্রশ্ন হচ্ছে, গত ৭৬ বছরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি নারীদের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে এবং এর যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে সেটাকে কীভাবে উপেক্ষা করা যায়?
সাত অক্টোবরের আগে প্রকাশিত ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে এই সহিংসতার অসংখ্য রিপোর্ট, প্রতিবেদন সহজেই পাওয়া যায়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই সব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেমন ইসরাইলে নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেনারেল কমিটি, জেরুজালেম-ভিত্তিক মহিলা আইনি পরামর্শ এবং সহায়তা কেন্দ্র,এর পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়।
এই প্রতিবেদনগুলো আইনি শুনানি, আইনি অভিযোগ, প্রতিরক্ষা অ্যাটর্নিদের নথি এবং বন্দীদের সাক্ষ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে, ইসরাইলে আটকে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর যৌন সহিংসতা, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণের চিত্রিত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যদি নারীবাদীরা সত্যিই যুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়, তাহলে ফিলিস্তিনি নারীদের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধগুলো নিয়ে তাদের অবশ্যই কথা বলা উচিত।
গত দশ মাস ধরে ৪০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু এবং ২১ হাজারটিরও বেশি শিশুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটলেও নারীবাদীদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। বরং তারা ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের ওপর চলমান সহিংসতা চরমভাবে উপেক্ষা করে গেছে।
একইভাবে, গত ১২ জুন প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও ফিলিস্তিনি নারীদের দুর্দশার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে এবং এসব ঘটনা তাদের বিবেককেও আলোড়িত করতে পারেনি।
যৌন সহিংসতার সংস্কৃতি
যৌন সহিংসতার ঘটনা পুরুষদের বিরুদ্ধেও হয়েছে। ইসরাইলি সৈন্যরা ফিলিস্তিনি পুরুষদেরকে জোরপূর্বক নগ্ন করে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে সেদেহ তামান কারাগার থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে দেখা যায় ইসরাইলি সেনারা একজন ফিলিস্তিনিকে গণধর্ষণ করছে। বেজালেল স্মোট্রিচসহ ইসরাইলি মন্ত্রীরা ভিডিওটি প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছিলেন, তবে যৌন নিপীড়নের কোনো নিন্দা তারা করেননি। লিকুদ পার্টির হ্যানোচ মিলভস্কির মতো কেউ কেউ এই নির্যাতনকে বৈধতা দিয়েছেন। যেমনটি পশ্চিমা নারীবাদীরা নীরব রয়েছে।
পাশ্চাত্যের নারীবাদীদের মতো বিশ্বের অন্য প্রান্তের নারীবাদীদের নীরবতাও নিন্দনীয়। ফিলিস্তিদের সীমাহীন দুর্দশার ব্যাপারে সবার নীরবতা থেকে মানবতার চরম অধ:পতনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
যখন নিহতদের ৭০% নারী ও শিশু, ফিলিস্তিনি নারীরা যখন ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের খুঁজে বের করে, মায়েরা যখন তাদের প্রাণহীন শিশুদের আলিঙ্গন করে, যখন পরিবারগুলো শরণার্থী শিবিরে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যায়, ইসরাইলের অবরোধের কারণে মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের অনাহারে মরতে দেখে এবং যখন শিশুরা চরম দুর্ভিক্ষে খাবারের জন্য এদিক ওদিক ছুটাছু করে এবং কান্নাকাটি করে তখন এ নিষ্ঠুর নীরবতা কোনো রাজনীতি নয় বরং তা নারীদের প্রতি কথাকথিত নারীবাদীদের বিশ্বাসঘাতকতা।
No comments