‘৭ খুনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারেক-আরিফ’

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হক এবং বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল এ প্রতিবেদন দাখিল করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে নূর হোসেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। এ ঘটনার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ অপহরণ থেকে শুরু করে নদীতে লাশ ডুবানো পর্যন্ত লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেন জড়িত ছিলেন। তবে লে. কমান্ডার (অব.) এমএম রানা অপহরণ পর্যন্ত অংশ নিয়ে আংশিক জড়িত ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ওদিকে, সাত খুনের ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে শাহজাহান আলী মোল্লাই দায়িত্ব পালন করবেন বলে আদেশ দিয়েছে আদালত। তাকেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার সরকার তদন্ত কমিটির প্রধান পদে পরিবর্তন আনে। এতে শাহজাহান মোল্লার পরিবর্তে কমিটি প্রধান হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) মো. আবদুল হাকিমকে নিয়োগ দেয়া হয়। র‌্যাবের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, র‌্যাব এর আগে তিন দফায় প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। এখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলো। তবে র‌্যাবের এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাত খুনের বিচার হবে না। বিচার হবে তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ যে চার্জশিট দাখিল করবে তার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের পর নতুন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া নিয়ে আদালত জানতে চেয়েছিল। সূত্র জানায়, র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাত জনকে অপহরণ ও হত্যা ঘটনায় র‌্যাবের এসআই পূর্ণেন্দ্র বালা, এবি আরিফ হোসেন, নায়েক নাজিম (ড্রাইভার), নায়েক দেলোয়ার (ড্রাইভার), ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আব্দুল আলীম, আলামিন, তৈয়ব, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, আলামিন, হাবিলদার এমদাদ, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সৈনিক আসাদ, সার্জেন্ট এনামুল, এএসআই বজলু, হাবিলদার (ড্রাইভার) নাছির, সৈনিক তাজুল পুরো সময় উপস্থিত ছিল। তদন্তে দেখা যায়, র‌্যাব ১১-এর অধস্তন সদস্যগণ ঘটনাপ্রবাহের প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সরকারি দায়িত্ব মনে করে থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তারা প্রাণের ভয়ে ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে নিজেদের জড়িত রেখেছে বলে প্রতীয়মান হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত জনকে গত ২৭শে এপ্রিল অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে। এরপর র‌্যাব ১১-এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার অভিযোগ করেন নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। ৫ই মে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান আলী মোল্লাকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের কমিটি হয়। অন্যদিকে, সেভেন মার্ডারে র‌্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব ১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারিক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানাকে অবসরে পাঠানো হয়। পরে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চের নির্দেশে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এরই মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.