শান্তিতে চ্যাম্পিয়ন মালালা-কৈলাস

‘শান্তিতে চ্যাম্পিয়ন’ পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই ও ভারতের কৈলাস সত্যার্থীর হাতে তুলে দেয়া হলো এ বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। নরওয়ের রাজা পঞ্চম হেরাল্ডের উপস্থিতিতে নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি গতকাল যখন তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয় তখন পুরো হলরুম করতালিতে ফেটে পড়ে। এর আগে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মালালা ইউসুফজাই। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থরবিয়ন জাগলান্ড এই দু’ ইতিহাস রচনাকারীকে শান্তিতে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত করেন। মালালা ও সত্যার্থী শিশু শিক্ষা, শিশুর অধিকারের পক্ষে যে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। প্রথমে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় কৈলাস সত্যার্থীর হাতে। এর আগে রাহাত ফতেহ আলী খান সংগীত পরিবেশন করেন। তারপরে পুরস্কার দেয়া হয়। এরপর ওস্তাদ আমজাদ আলী খান পরিবেশন করেন যন্ত্র সংগীত। শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করার পর কৈলাস সত্যার্থী তার বক্তব্যে বলেন, এ পুরস্কার শিশু দাসত্বের বিরুদ্ধে তার কাজকে আরও এগিয়ে নিতে বিরাট এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যে লাখ লাখ শিশু অবহেলিত আছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। তাদের না বলা কথা তিনি। তিনি বলেন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি একটি চেয়ার খালি রেখেছেন। এটি নির্বাক শিশুদের জন্য। তিনি বলেন, আমাদের শিশুদের স্বপ্নকে অস্বীকার করার মতো ভয়াবহ সহিংসতা আর হতে পারে না। স্বাধীনতার চেয়ে শিকলে বন্দি দাসত্বকে আমি মেনে নিতে পারি না। তিনি মালালা ইউসুফজাইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাকে নিজের মেয়ে হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তার সাহস অবর্ণনীয়। অনুষ্ঠানে মালালা তার স্কুলের বান্ধবীদের হাজির করেন। এর মধ্যে ছিলেন তার দু’ সহপাঠী। নোবেল বক্তব্যে মালালা বলেন, আমি মালালা। আজ আমি একা নই। আমি অনেক। আমি বিশ্বের শিক্ষাবঞ্চিত ৬ কোটি ৬০ লাখ মেয়ে। তিনি যখন উপস্থিত পিতা-মাতাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের ভূমিকা তুলে ধরছিলেন তখন তাদের চোখের কোণে অশ্রু দেখা যায়। আনন্দে ভেসে যাচ্ছিলেন তারা। হাসি-কান্নার এক অবিমিশ্র দৃশ্যের অবতারণা হয়। মালালা বলেন, মা আমাকে শিখিয়েছেন ধৈর্য ধরতে। তিনি শিখিয়েছেন ইসলাম কি। আর পিতা আমাকে বলতেন দু’টি কথা মনে রাখবে। এক. চুপ থাকলে নিহত হতে হবে। দুই. সরব হলে নিহত হবে। আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি। মেয়ে শিশুদের শিক্ষার প্রচার, প্রসার ও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অগ্রপথিক পাকিস্তানের ১৭ বছর বয়সী নির্ভীক কিশোরী মালালা ইউসুফজাই সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। মালালার সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করলেন ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী (৬০)। এরই মধ্যে বহু বিরল সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন মালালা। নোবেল গ্রহণের প্রাক্কালে এক সংবাদ সম্মেলনে মালালা ইউসুফজাই বলেন, আমরা এখানে শুধু আমাদের পুরস্কার গ্রহণ করতে আসি নি, এই মেডেলটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে আসি নি। আমরা এখানে বিশেষ করে শিশুদের বলতে এসেছি, তোমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে, তোমাদের অধিকার সম্পর্কে তোমাদেরকেই মুখ খুলতে হবে। তোমরাই পারো বিশ্বকে পরিবর্তন করতে। ১৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় মালালার মাথায় গুলি করে তালিবানরা। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর অবস্থায় তাকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয় এবং ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন মালালা। সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মালালা মেয়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেখানেই বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন এবং এ পর্যন্ত নানা বিরল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হতে চান মালালা
মেয়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অকুতোভয় কিশোরী পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই (১৭)। নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার আগে মালালা বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ ইচ্ছার কথা। মালালা বললেন, তিনি রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়তে চান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। নোবেল জয়ী এ কিশোরী বলছিলেন, আমি আমার দেশের সেবা করতে চাই এবং আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমার দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে এবং প্রতিটি শিশু পড়ালেখার অধিকার পাবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বৃটেনে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা লালন করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন। মালালা বলেন, যদি আমি রাজনীতি এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে আমার দেশকে সবচেয়ে ভালভাবে সেবা করতে পারি, সে ক্ষেত্রে আমি অবশ্যই সেটাকে বেছে নেবো। বেনজীর ভুট্টো তার অনুপ্রেরণা বলে জানান মালালা ইউসুফজাই। ২০০৭ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুই মেয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজীর।

No comments

Powered by Blogger.