চাঁদার জন্য বাস আটকাল ছাত্রলীগ, ছাড়াল পুলিশ

(চাঁদা বৃদ্ধির দাবিতে গাবতলী-আবদুল্লাপুর রুটে চলাচলকারী নিউ পল্লবী এক্সপ্রেসের আটটি বাস রাস্তা থেকে কলেজে নিয়ে আটকে রেখেছিলেন মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। পরে পুলিশ গিয়ে বাসগুলো ছাড়িয়ে আনে। ছবি: সংগৃহীত) গাবতলী-আবদুল্লাপুর রুটে চলাচলকারী নিউ পল্লবী এক্সপ্রেসের আটটি বাস রাস্তা থেকে কলেজে নিয়ে আটকে রেখেছিল মিরপুরের বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। পরে পুলিশ গিয়ে বাসগুলো ছাড়িয়ে আনে। বাসের মালিকের অভিযোগ, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাসগুলো কলেজে নিয়ে আটকে রেখেছিলেন। নিউ পল্লবী এক্সপ্রেসের পরিচালক (অর্থ) সিরাজুল হক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে এই অভিযোগ করেন। সিরাজুল হক জানান, অক্টোবর মাসে তাঁরা গাবতলী-আবদুল্লাপুর রুটে ৩০টি বাস নামান। বাস চলাচল শুরুর কয়েক দিন পরই বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই রুটে বাস চলতে হলে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের প্রতি বাসের জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হবে। যেহেতু তাঁরা ৩০টি বাস নামিয়েছেন, কাজেই তাঁদের প্রতিদিন ছয় হাজার টাকা করে মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। অন্যরা সবাই এভাবে দেয়। নয়তো বাস চলতে দেওয়া হবে না। অনেক বাদানুবাদের পর তাঁরা প্রতি বাসের জন্য ১০০ টাকা করে নিতে রাজি হন। এই হিসাবে প্রতিদিন ৩০টি বাসের জন্য তিন হাজার করে মাসে ৯০ হাজার টাকা দিতে হতো। দুই মাস ধরে এভাবেই চলছিল।
কিন্তু এখন ছাত্রলীগের নেতারা প্রতি বাসের জন্য ৩০০ টাকা করে চাইছেন, উল্লেখ করে সিরাজুল হক বলেন, এই টাকা দিতে রাজি না হলে কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁরা বাস চলতে দেবেন না। কিন্তু এর পরও বাস চালালে গতকাল বুধবার দুপুরে ছাত্রলীগের নেতারা কলেজের সামনের রাস্তা থেকে একে একে আটটি বাস থামিয়ে সেগুলো কলেজের মাঠে ঢুকিয়ে রাখেন। এরপর বাসমালিকপক্ষ মিরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাসগুলো কলেজ থেকে বের করে আনার নির্দেশ দেন। এরপর দারুস সালাম থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এমরানুল কবির বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়ে বাসগুলো কলেজ থেকে ছাড়িয়ে আনেন।
এই ঘটনায় সন্ধ্যায় থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ কোনো অভিযোগ না নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতা করার নির্দেশ দেয় বলে দাবি করেন সিরাজুল। তিনি বলেন, ‘তারা (পুলিশ) বলে, ছাত্রলীগের সঙ্গে ঝামেলা করে পারবেন না। আমরা এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’
সেপ্টেম্বর মাসে এইচ এম জাহিদ মাহমুদকে সভাপতি ও মজিবুর রহমান ওরফে অনিককে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের বাংলা কলেজের কমিটি গঠন করা হয়। চাঁদাবাজির এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জাহিদ মাহমুদ অভিযোগ অস্বীকার করেন। আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলো কে বলেন, ‘আমরা তখন ক্যাম্পাসে ছিলাম না। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে আমরা জানতে পারি এই কোম্পানির কোন বাস নাকি কলেজের এক ছাত্রের মোটরসাইকেল ভেঙে দিয়েছিল। তাই ছাত্ররা ওই বাসগুলো কলেজে ঢুকিয়েছিল। কিন্তু আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসগুলো ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি।’ কোন ছাত্রের মোটরাসাইকেল ভেঙেছিল, জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোনো নাম বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছিলাম কলেজের ছাত্ররা কয়েকটি বাস আটকে রেখেছে। পরে পুলিশ গিয়ে বাসগুলো ছাড়িয়ে এনেছে।’ বাসের মালিকপক্ষ মামলা করতে চাইলেও মামলা নেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কেউ তো মামলা করতে আসেনি।’
পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের উপকমিশনার নিশারুল আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি থানাকে বলেছি চাঁদার মামলা নিতে। মামলা না নিলে কেন নেওয়া হলো না, সেটি আমি দেখব।’

No comments

Powered by Blogger.