মালালা ও কৈলাসের নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ

নরওয়ের রাজধানী আসলোয় বুধবার যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন মালালা ইউসুফজাই ও কৈলাস সত্যার্থী। এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি বলে, মালালা ও কৈলাস উভয়ই ‘শান্তির চ্যাম্পিয়ন’।
মেয়ে শিশুদের শিক্ষা প্রচার, প্রসার ও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কর্মী পাকিস্তানে কিশোরী মালাল ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেন ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী। সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জনকারী মালালা এরই মধ্যে বহু বিরল সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৫ বছর বয়সে পকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় মামালার মাথায় গুলি করে তালেবানরা। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য গুরুতর অবস্থায় তাকে ইংল্যান্ডে নেয়া হয়। বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্রোপচারের পর ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন মালালা। কৈলাসও শিশুদের জন্য কাজ করতে গিয়ে জীবনের হুমকি পেয়েছেন। তার দুই সহকর্মী খুনও হয়েছে। নোবেল পুরস্কার নেয়ার পর কৈলাস বলেন, এ পুরস্কার শিশু দাসত্বের বিরুদ্ধে আরও কাজ করার জন্য বিরাট একটি সুযোগ হিসেবেই দেখছেন তিনি। মালালা এবং কৈলাস দুজনকেই যৌথভাবে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কারের অর্থ ভাগ করে নেবেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন মালালার : যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষে পাকিস্তানে ফিরে জোর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন সবচেয়ে কম বয়সী নোবেল পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই (১৭)। তিনি একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন- এমন স্বপ্নও রয়েছে তার। বুধবার নোবেল পুরস্কার গ্রহণের আগে হার্ডটক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্টিফেন সাকুরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান মালালা।
নারী শিক্ষার প্রসারে সচেতনতা ক্যাম্পেইন করার দায়ে ২০১২ সালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মালালার মাথায় গুলি করে পাকিস্তানের তালেবান যোদ্ধারা। এরপর বিশ্বে আলোচনার মধ্যমণিতে আসেন মালালা। সাক্ষাৎকারে মালালা বলেন, ‘আমি আমার দেশকে পরিচালনা করতে চাই। দেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের। আমি প্রতিটি শিশুকে শিক্ষিত হিসেবে দেখতে চাই।’ ২০০৭ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত বেনজির ভুট্টো (যিনি পাকিস্তানের দু’বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন) তাকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মালালা বলেন, ‘যদি আমি সবচেয়ে ভালো রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে পরিচালনা করতে পারি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে বেনজির ভুট্টোর আদর্শকেই বেছে নেব।’ নোবেল পুরস্কার পাওয়া সবচেয়ে বড় সম্মানের বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কিশোরী মালালা বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল শিশুদের স্কুলে যেতে দেখার এবং শিক্ষার প্রতি সচেতনতা সমাবেশে অংশ নেয়ার। নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় সেই দায়িত্বটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাকে আরও বেশি আশা, উৎসাহ ও সাহস জুগিয়েছে। আগের চেয়ে আমি বেশি শক্তিশালী মনে করি, কারণ এখন আমার সঙ্গে অনেক লোক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে আমাদের প্রচুর দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আমার নিজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যটা একটু বেশি। কারণ, আমার দেশ ও সম্প্রদায়কে উন্নতি করতে আমাকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, যা কঠিন ও বিশাল একটি দায়িত্ব।’
আজ নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন মালালা। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.