রেলপথ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করেন তারা

ভৈরবের বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ। ১৯৭১ সালে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। তখন হাজী আসমত কলেজ কেবিনেটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক সেনারা ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। গণহত্যার প্রতিবাদে ভৈরবে ছাত্রদের নিয়ে প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেন তিনি। তখনকার টগবগে যুবক এই ছাত্রনেতা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে পরামর্শ করে ৩০ মার্চ ভৈরব থেকে ভারতের আগরতলায় চলে যান। তখন তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ছাত্রনেতা মির্জা সুলায়মান, তারেক, হুমায়ুন কবির, রামদাশ সাহা, দয়াল সাহা। ভারতে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু না হওয়ায় দুদিন পর আবার ভৈরবে ফিরে আসেন। ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ পাক সেনারা ভৈরব শহরটি দখল করে নেয়। এদিন অস্ত্রধারী পাকসেনারা ভৈরবে চতুর্দিক থেকে গুলি করতে শহরে প্রবেশ করে। প্রবেশের সময় অনেক নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধাদের হত্যাসহ ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ভৈরবের ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে আলগড়া নামক এলাকায় খেয়া পারের জন্য অপেক্ষমাণ ৪-৫শ’ নারী, পুরুষ ও শিশুকে গুলি করে পাকসেনারা এদিন হত্যা করে।
ফখরুল আলম আক্কাছ এদিন এ খেয়াঘাটের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের আধা ঘণ্টা আগে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে তৎকালীন রায়পুরা থানার সররাবাদ গ্রামে তার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন বলে তিনি জানান। ওই গ্রামে কয়েকদিন থাকার পর তিনি মে মাসের দিকে মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিতে পুনরায় ভারতে চলে যান।
দেড় মাস ট্রেনিং শেষে মুজিব বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার ভৈরবের ছাত্রনেতা ফয়সাল আলমের নেতৃত্বে তিনিসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে এদেশে প্রবেশ করেন। তিনি জানান, ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র কাঁধে নিয়ে রাতের বেলায় ভৈরব আসার পথে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর এলাকায় পৌঁছলে পাকসেনারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। তারা পাল্টা গুলি ছুড়ে পালাতে সক্ষম হলেও ভৈরবের মুক্তিযোদ্ধা আশুরঞ্জন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তিন বেলা খাবারসহ রাতে কোথায় কোন গ্রামে বা কার বাড়িতে ঘুমাবে তার কোনো ঠিক ছিল না। তিনি বলেন, কোনো কোনো দিন রাতে ঝোপজঙ্গলে বা খড়ের মধ্যে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে।
এছাড়া তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে রামনগরে তিতাস গ্যাসলাইন ও সেতু ধ্বংস করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় বলে তিনি জানান। ভৈরবের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ধ্বংস করে পাকসেনাদের যোগাযোগ মাধ্যম অচল করেছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি তিনি এখনও করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই এদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। তার ডাকেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।
এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভৈরব পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.