ব্যক্তির জন্য দেশ কেন খেসারত দেবে?- পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র

পদ্মা সেতু প্রকল্পে যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে, সেটা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এখন স্পষ্ট। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ ১০ জনের নাম এসেছে। বিশ্বব্যাংক নিয়োজিত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলও এ ব্যাপারে একমত হয়েছে।
কিন্তু মামলা হবে কতজনের নামে, তা নিয়ে দুই পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের সম্মতির ওপরই নির্ভর করছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তদন্তে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের সম্পর্কে আরও তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন—এই অজুহাতে দুদক সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম বাদ দিতে চাইছে। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে দুদকের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল মেনে নেয়নি। এটি একটি গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। পদ্মা সেতু ও সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে শুরু থেকেই সরকারের একগুঁয়েমি ও অযৌক্তিক আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠার পর শুরুতে সরকার তা স্বীকার করা দূরে থাক, আমলেই নিতে চায়নি। কিন্তু চলতি বছরের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করলে সরকারের টনক নড়ে। তারপর যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ, উপদেষ্টা ও সচিবের ছুটিতে যাওয়া, নতুন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ—এসব শর্তে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে রাজি হয়।
এখন দেখা যাচ্ছে, সেই আবুল হোসেনকে ছাড় দেওয়া না-দেওয়ার প্রশ্নেই আবার অচলাবস্থা চলছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর চেয়ে ব্যক্তি আবুল হোসেন বড় হতে পারেন না। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের সব কাজেই তাঁর জবাবদিহি থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে না, তেমনি বিশ্বব্যাংকও ঋণ দিতে রাজি হবে না।
বিশ্বব্যাংক নয়, আমাদের স্বার্থেই পদ্মা সেতু প্রয়োজন। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানই শুধু বাড়বে না, জিডিপিতেও প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হবে। ইতিমধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে, তদন্তে তথ্যপ্রমাণও মিলেছে। এখন সেসবের ভিত্তিতে অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি কর্তব্য।
দুদক যদি এই কাজটি নির্দ্বিধায় করতে পারে, তাহলে সেটি হবে তাদের বড় সাফল্য। এর মাধমে কেবল দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্মান ও স্বীকৃতি বাড়বে। আর সরকারের পদাধিকারীদেরও দুর্নীতির প্রবণতা কমবে। তাঁরা ভাববেন, দুর্নীতি করে সহজে পার পাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে পারলে সরকারের জন্যও সেটি তার হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কাজে লাগবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়।

No comments

Powered by Blogger.