মূল রচনা: লুৎফুর রহমানের সাক্ষাৎকার- ‘আমি সব সময় বাংলাদেশের কথা বলি’

বাংলাদেশের কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মিস করেন? আমার বাড়ি। আমার গ্রাম। আমার দেশের মানুষ। এদের সবচেয়ে বেশি মিস করি। আমাদের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা খুব সহজ-সরল। এটা এখানে দেখতে পাই না।
আপনার পুরোনো দল (লেবার পার্টি) ছেড়ে একা নির্বাচন করার খুব কঠিন একটি সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছিলেন। তখন মনের মধ্যে কোন জিনিসটা কাজ করছিল?
আমি কিন্তু দল ছাড়িনি। ছোটবেলা থেকে আমি এই দল করেছি। দলত্যাগের পরও লেবার পার্টির বড় একটি অংশ আমার সঙ্গে ছিল। এখনো আমি লেবার পার্টির আদর্শে বিশ্বাসী। একা নির্বাচন করাটা খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এটাও ঠিক নির্বাচন কিন্তু আমি একা করিনি। কাউন্সিলের ভেতরে-বাইরে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা সঙ্গে ছিলেন।
অফিসে আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো চেয়ারে বসতে দেখিনি? সারাক্ষণ ছুটোছুটির ওপর থাকেন।
হা! হা! আমি এটা এনজয় করি। এতে করে বেশি কাজ করা যায়।
দৈনিক কত সময় কাজ করেন?
আনটিল দ্য বডি এইকস। আমি দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমোনোর সুযোগ পাই না।
মেয়র, কাউন্সিল—এসব কিছুর বাইরে ব্যক্তিগত সময়গুলো কীভাবে কাটে?
এই সময়টা আমি আমার পরিবারকে দিই। আমার স্ত্রী, আমার ছেলেমেয়েরা—ওদের সঙ্গে সময় কাটাই। আমার বাবা আছেন। বড় ভাই-ভাতিজারা আছে। আমরা যৌথ পরিবারে সবাই মিলেমিশে থাকি। ব্রিকলেনে। অবসরে বই পড়া হয়। মহান মানুষদের জীবনী পড়তে ভালো লাগে। সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন এসব বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করে। প্রতি রাতেই আমার কিছু না-কিছু পড়তে হয়।
আপনার টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র নির্বাচিত হওয়াটা এখানকার বাংলাদেশিদের জন্য অবশ্যই সুসংবাদ। কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য কীভাবে সুসংবাদ হতে পারে?
যখন সভা-সেমিনারে যাই, আমি সব সময় বাংলাদেশের কথা বলি। নিজেকে পরিচয় দিই বাংলাদেশি হিসেবে। অনেকে এটা শুনে অবাক হয়। গত লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পুরো শুটিং টিমকে আতিথেয়তা দিয়েছি। তাদের নানাভাবে সমর্থন দিয়েছি।
আপনার এলাকার জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন আপনি পেয়েছেন। মানুষের মন জয় করে নেওয়ার জন্য কোন গুণটা দরকারি?
আমি তো গুণ কিছু জানি না। যদি আমি সেকেন্ড টার্ম জিততে পারি, তাহলে বুঝতে হবে কোনো নিশ্চয়ই গুণ আছে। (হাসি)
পুরোটাই হচ্ছে আসলে সেবা।
বাংলাদেশিরা আপনাকে কীভাবে সমর্থন দিয়েছে?
আমার এই ‘জার্নি’তে আমি মনে করি পুরো বিশ্বের বাংলাদেশিদের অবদান আছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর বাংলাদেশের তো অবশ্যই। গোটা বিশ্বের বাংলাদেশিরা আমাকে বিজয়ের পর অভিনন্দন জানিয়েছে। আমার বিজয় তাই সব বাংলাদেশির বিজয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্য কি আপনার কিছু বলার আছে?
যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা দেশ কীভাবে চালাতে হয় সেটা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে অনেক ভালো জানে। আমি শুধু একটা কথাই বলব, তারা যেন বাংলাদেশের সব সম্পদ ও সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগায়। আর আমাদের অবশ্যই স্বনির্ভর হতে হবে। আমার কাছে সেটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। আমি একটি উন্নত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চাই।
সাক্ষাৎকার: ই. হো. চৌ.

No comments

Powered by Blogger.