৪৫ বছর পর গাজায় খালেদ মেশাল

দীর্ঘ ৪৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর ফিলিস্তিনের গাজায় ফিরলেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল। হামাসের প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার মিসর থেকে গাজায় পৌঁছান তিনি। ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের বিজয় মিছিলে তিনি যোগ দেবেন।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস মেশালের এ সফরকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের বিশাল অর্জন বলে উল্লেখ করেছে। মাত্র ১১ বছর বয়সে পশ্চিম তীর ছেড়েছিলেন মেশাল। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে বীরের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
মেশাল হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান। আট দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গত ২১ নভেম্বর ইসরায়েল ও গাজা কর্তৃপক্ষ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় ফিলিস্তিন। এমন সময়েই গাজা সফর করলেন মেশাল। তিনি ওই অস্ত্রবিরতিকে ইহুদি রাষ্ট্রের ওপর ফিলিস্তিনের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। সফরকালে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনকারী দলগুলোর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ ছাড়া গাজার বাসিন্দা এবং গত মাসের সংঘর্ষে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার আহমেদ জাবারি ও বেসামরিক নাগরিকসহ ১৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। অন্য দিকে গাজার বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর হামলায় চারজন বেসামরিক ব্যক্তিসহ ছয় ইসরায়েলি নিহত হয়।
হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। তবে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই। আজ শনিবার এক শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন শুরু হবে। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে মেশালের সফরের ঘোষণা দেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে মেশাল বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। হামাসের আমন্ত্রণে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহও এ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে।
মেশালের জন্ম ১৯৫৬ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লার উত্তরে সিলওয়াদ গ্রামে। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর তিনি কুয়েতে চলে যান। সেখান থেকে যান জর্দান। ১৯৭১ সালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন।
হামাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর। জর্দানে থাকতেই হামাসের সঙ্গে মেশালের পরিচয়। এরপর কাতারে নির্বাসনে পাঠানোর আগে জর্দান তাঁকে কিছুদিন কারাবন্দি করে রাখে। ইসরায়েলের হাতে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন নিহত হওয়ার পর ২০০৪ সালে নির্বাসনে থেকেই সংগঠনটির নেতৃত্ব হাতে নেন মেশাল। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে তিনি দল পরিচালনা করতেন। ২০০৭ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ পায় হামাস। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি সিরিয়া ছেড়ে মিসরে যান। বর্তমানে তিনি দোহা ও কায়রোয় থাকছেন। মেশাল সম্প্রতি তাঁর পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা এবং মিত্রশক্তিগুলো মনে করছেন, পদত্যাগ করলেও তাঁর নেতৃত্ব বহাল থাকবে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগাল পালমর জানান, মেশালের গাজা সফরের ব্যাপারে তাদের কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, 'হামাসের সদস্যদের ব্যাপারে আমাদের আলাদা কোনো অবস্থান নেই। হামাস মানে হামাসই।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি, টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.