হিলারির ঢাকা সফর  অগ্রবর্তী দলের বৈঠক  টিকফা সই না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি-অংশীদারি সংলাপের ঘোষণা আসতে পারে

সন্ত্রাসবাদ দমন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারির রূপরেখা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ’ নামের প্রস্তাবিত এ রূপরেখার আওতায় প্রতিবছর নিয়মিতভাবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে।


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আসন্ন ঢাকা সফরে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সহযোগিতার কাঠামো রয়েছে। এর আওতায়ই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ৩ মে বেইজিং সফরের কথা রয়েছে। সেখান থেকে তাঁর বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহুল আলোচিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তির (টিকফা) বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রটি জানিয়েছে, প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় হিলারির সফরে টিকফা সই না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রাচার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিলারি ক্লিনটন ৫ মে বিকেলে ঢাকায় আসছেন। সফরটি দুই দিনের বলা হলেও তাঁর ঢাকায় অবস্থান হবে ২৪ ঘণ্টারও কম। সফরের প্রস্তুতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মেগান সুয়েনিসহ একটি অগ্রবর্তী প্রতিনিধিদল গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে টিকফা সইয়ের জন্য ঢাকা প্রস্তুত কি না, তাঁরা জানতে চেয়েছেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের নিশ্চিতভাবে কিছু জানাতে পারেননি।
মেগান সুয়েনিসহ চার সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রাচার প্রধান খন্দকার মোহাম্মদ তালহার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে সফরের খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হিলারি ক্লিনটন সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরদিন তিনি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে হিলারির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, মার্কিন দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অণু বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন।
অংশীদারি সংলাপের রূপরেখা: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে গত বছর ‘কৌশলগত সহযোগিতা সংলাপ’ চালুর প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৌশলগত শব্দটি বাদ দিয়ে এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, কৌশলগত বললে কেবল নিরাপত্তার বিষয়টিই বিশেষ গুরুত্ব পায়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারের একটি সূত্র জানায়, এখন ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ’ নামে রূপরেখা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে।
এ সংলাপের আওতায় দুই দেশ নিয়মিতভাবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করবে। প্রয়োজনে সন্ত্রাসবাদ দমন, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, পরিবেশ, বাণিজ্যসহ সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলাদা ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা যেতে পারে। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় করা। বাংলাদেশ এ সহযোগিতার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাবে। নিজের স্বার্থ অটুট রেখে এক দেশ অন্য দেশকে সহযোগিতা করবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, হিলারির সফরের সময় এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে, তবে কোনো চুক্তি হবে না। শুধু বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ ঘোষণায় এ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.