আর কত প্রাণহানি

দুর্ভাগ্যজনক লঞ্চ দুর্ঘটনা আবারও আমাদের বেদনাহত করেছে। এবার লঞ্চ ডুবেছে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে। অথচ লঞ্চটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ৮০ জনের। ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন ছিল। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বাদবাকি যাত্রীদের কতজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে


পেরেছেন, আর কজনের লাশ মিলবে_সে তথ্য পেতে আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা নদীতীরে আহাজারি করে চলেছেন। কিন্তু এই আহাজারি কি লঞ্চ মালিকদের কানে কোনো দিনই পেঁৗছবে না? এভাবেই তাদের লোভের বলি হতে থাকবে সাধারণ মানুষ? নৌযানে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি কি প্রশাসন বা অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বিআইডবি্লউটিএ) কোনো দিনই নাড়া দেবে না? জবাব সম্ভবত 'না'। তা না হলে প্রায় প্রতিবছর লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত যাত্রীর প্রাণহানির পরও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? ৮০ জনের স্থলে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চলাচল করে কিভাবে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলার সংযোগস্থলে মেঘনা নদীতে সংঘটিত এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং চালকের অদক্ষতা বা অসতর্কতা। অবশ্য তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পরই সঠিক কারণ জানা যাবে। হয়তো তদন্ত কমিটিও গঠিত হবে গতানুগতিক এবং তদন্ত প্রতিবেদনের কথা জনগণ জানতেই পারবে না। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে না। জানা গেছে, ইতিপূর্বে সেখানে একটি কার্গো লঞ্চ ডুবে গিয়েছিল। ডুবন্ত কার্গো লঞ্চটির গায়ে যাতে অন্য কোনো লঞ্চ ধাক্কা না খায় সে জন্য সেখানে পতাকা লাগানো হয়েছিল। এর পরও সেই কার্গোতে লেগে লঞ্চটির তলা ফেটে ডুবে যায়। উল্লেখ্য, মাত্র দুই-তিন দিন আগে একই জায়গায় আরো একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে। একই পথে চলাচলকারী লঞ্চচালক হিসেবে সারেং-সুকানির তা অজানা থাকার কথা নয়।
নিকট অতীতে অনেক বড় বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটার পরও তা রোধ করার জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। যখনই কোনো লঞ্চ এভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন নামেমাত্র একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার দায়মুক্তির পথ খোঁজে। এভাবে কিছু সময় পার করতে পারলে লোকজন দুর্ঘটনার কথা ভুলে যায়, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়েও কেউ মাথা ঘামায় না। কিন্তু কোনো দেশের সরকার বা প্রশাসন দিনের পর দিন নৌযানে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারে না। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গেলে প্রতিদিনই দেখা যাবে, প্রতিটি লঞ্চই ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো ভূমিকাই চোখে পড়বে না।
লঞ্চডুবি থেকে রক্ষা পেতে হলে বিদ্যমান আইনকানুন সবাইকে সর্বতোভাবে মানতে হবে। এ আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিআইডবি্লউটিএ-কেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.