বেসরকারীকরণ বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরলেন মন্ত্রী -জানুয়ারিতেই নতুন শিল্পনীতি চূড়ান্ত হবে

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।
এ বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে শিল্পনীতি ২০০৯-এর প্রথম খসড়া নিয়ে আলোচনাকালে জানানো হয়েছিল, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেবে না সরকার। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’
কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ না করে ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটিয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিরাষ্ট্রীয়কণের আগে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।’
নিজের অবস্থান পরিবর্তন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আগে বলা হয়েছিল, চালু কোনো কারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হবে না। তবে বন্ধ কারখানাগুলো চালু করার আগে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। লাভজনক না হলে ওই বন্ধ কারখানাগুলো চালু করা হবে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ও পাকশী পেপার মিল চালু করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। লাভজনক হলে এগুলো অচিরেই চালু করা হবে।’
শিল্পনীতির সংশোধিত খসড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সংযোজন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী গতকাল এসব কথা বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংশোধিত খসড়া শিল্পনীতিটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে www.moind.gov.bd পাওয়া যাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটটি গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনোভাবে খোলা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত খসড়ায় কী কী সংযোজন বা বিয়োজন করা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানা যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে শিল্পসচিব দেওয়ান জাকির হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম, যুগ্ম সচিব জে এন বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তির আগেই খসড়া শিল্পনীতি ২০০৯ চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খসড়া শিল্পনীতির ওপর ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণের সুবিধার্থে খসড়া শিল্পনীতিটি ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছেন। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত সচিবের ই-মেইল addlsecy@moind.gov.bd এবং উপসচিবের (নীতি) ই-মেইল alam3653@moind.gov.bd অথবা ৯৫৬৩৫৫৩ নম্বর ফ্যাক্সে মতামত পাঠানো যাবে।
বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নতুন শিল্পনীতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে ‘আবাসিক সুবিধা’ বা ভিসা ছাড়াই বসবাসের সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, খসড়া শিল্পনীতিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শিল্পের তালিকায় রাখা হয়েছে—কৃষিভিত্তিক ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য শক্তি, পর্যটনশিল্প, মৌলিক রসায়ন ও রাসায়নিক দ্রব্য, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও আইসিটি, উচ্চমূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক, ওষুধ, পলিমার উত্পাদন ও প্লাস্টিক শিল্প, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, হালকা প্রকৌশল শিল্প, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ, আসবাব, ডায়মন্ড কাটিং ও পলিসিং এবং হস্তশিল্প।
তবে ১৭টি শিল্পকে নিয়ন্ত্রিত খাতের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক শক্তি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও টাঁকশাল, বনায়ন ও সংরক্ষিত বনভূমির সীমানায় যান্ত্রিক আহরণ সংরক্ষিত শিল্প হিসেবে রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.