এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরল নজির

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের দুর্নীতি তদন্ত শুরু করেছে এনবিআরেরই সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। প্রশাসনের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে সিআইসি চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের পাশাপাশি তার স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা জাকিয়া মনসুর হোসেনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে। নিজে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করে রাজস্ব প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত করতে বিরল এই নজির স্থাপন করেছেন গোলাম হোসেন নিজেই। তার নির্দেশেই সিআইসি ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়ে ২০০৭ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ লেনদেন, এফডিআরসহ যে কোনো বিনিয়োগের তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্র।
জানতে চাইলে গোলাম হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমি সাহস দেখিয়েছি। অন্য সবাইকেও এভাবে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, এটা স্বচ্ছতার জন্য। নিজেরটা দিয়ে শুরু করলাম, এরপর অন্য সবারটা চাওয়া হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান তার অর্থ অনুসন্ধানের এই উদ্যোগকে তার সংস্থার কার্যক্রমের স্বচ্ছতার অংশ বলে মনে করছেন।
২০১২ সালের অক্টোবরে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন গোলাম হোসেন। তার ঠিক আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন তিনি। আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে। বিসিএসের ১৯৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা শুল্ক বিভাগে কাজ শুরু করার পর বিভিন্ন দফতরে বিভিন্ন পদে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাসেও কাজ করেন তিনি। তিনি ১৯৯৬-৯৮ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ছিলেন।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৩ (এফ) ধারার ক্ষমতাবলে সিআইসির পাঠানো ওই চিঠিতে হালনাগাদ তথ্য আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। এই তথ্য সময়মতো দিতে না পারলে ব্যাংকগুলোকে এককালীন ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সিআইসি। দেরির জন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে জরিমানার কথাও বলেছে তারা। পাঠানো চিঠিতে গোলাম হোসেন ও তার স্ত্রীর রাজধানীর শান্তিনগরের বর্তমান ঠিকানার পাশাপাশি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের স্থায়ী ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন ও তার স্ত্রী জাকিয়া মনসুর হোসেনের নামে আপনাদের ব্যাংকে একক বা যৌথ নামে কোনো মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যে কোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যে কোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যে কোনো ধরনের সেভিংস ইন্সট্র–মেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যে কোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে আগামী ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্বের স্বার্থে বিষয়টি অতীব জরুরি। রাজস্ব আহরণের স্বার্থে গোপনীয় হিসেবে বিবেচনা করে সহযোগিতা করবেন।

No comments

Powered by Blogger.