চট্টগ্রামে চার কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ব্যবসায়ী

মাছের ট্রলার দিয়ে মৎস্য ব্যবসার নামে বিশাল অংকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় চার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এক ফিশিং ব্যবসায়ী। নগরীর ফিশারিঘাটের মেসার্স আরিফ ট্রেডিংয়ের মালিক আনোয়ারুল ইসলাম এসব প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় ৭ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়েছেন পৌনে দুই কোটি টাকা, আরও প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ধার হিসেবে। দিন দিন লম্বা হচ্ছে পাওনাদারদের তালিকা। ওই ৭ ব্যবসায়ী পাওনা দাবি করে স্থানীয় কর্ণফুলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকিরা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও থানার ওসির মাধ্যমে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছেন। বর্তমানে আনোয়ারুল ইসলামের ট্রলার দুটি নিয়ে চলছে টানাটানি। শিকলবাহা খালে অবস্থানরত ট্রলারটি পাওনাদাররা আটকে রেখেছে। ডিসিএইচ ইত্তেফাক ফিশারিজ লিমিটেড ট্রলার দুটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে পাওনাদার ও ক্রেতা দাবিদাররা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। স্থানীয় থানা ও চেয়ারম্যান বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগকারী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নগরীর ফিশারিঘাট এলাকার মেসার্স আরিফ ট্রেডিংয়ের মালিক আনোয়ারুল ইসলামের এফভি সালাম-০২ ও এফভি ফিস হান্টার নামের দুটি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। ফিশিং ট্রলারগুলো দিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণের কথা বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন (ঋণ) নেয় আনোয়ারুল ইসলাম। শিকলবাহা এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিনের কাছ থেকে ২৮ লাখ ৫০ হাজার, জামাল উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ৫৬ লাখ ২৮ হাজার, ফিশারিঘাট এলাকার ফারুক সওদাগরের কাছ থেকে ৩৯ লাখ ৬২ হাজার, বেলাল হোসেনের কাছ থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার, পাথরঘাটা এলাকার ভক্ত দাশের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, মুরাদপুর এলাকার আলী আকবরের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা মিলে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাদন নেয় আনোয়ারুল আরিফ। পরে এক সময় তারা জানতে পারেন, তাদের এসব টাকা পরিশোধ না করে আত্মগোপন করে দেশের বাইরে চলে গেছেন ফিশিং ব্যবসায়ী আনোয়ার। পাওনাদার সেলিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফারুক সওদাগর, বেলাল হোসেন, ভক্ত দাশ ও মো. আলী আকবর নামের সাত ব্যবসায়ী কর্ণফুলী থানা ও সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের পরিচালককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে ট্রলারের মৎস্য ব্যবসার বিপরীতে এসব টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
জানা গেছে, আনোয়ারুল ইসলাম আত্মগোপনে যাওয়ার আগে থেকে ফিশিং ট্রলার দুটি শিকলবাহা খালে ফেলে যান। তিনি আনোয়ারুল আরিফ ট্রেডিং এবং ইসলাম ট্রেডিং নামে দুটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এছাড়াও তিনি ডিসিএইচ গ্রুপের পরিচালক।
পাওনাদার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন জানান, আনোয়ারুল ফিশিং ট্রলার দুটি দেখিয়ে অনেক জনের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন। বর্তমানে আমাদের পাওনা না দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এতদিন ফিশিং ট্রলার দুটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখন জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি রেজিস্ট্রিবিহীন একটি ভুয়া বিক্রয় দলিল বানিয়ে ট্রলার দুটির মালিকানা দাবি করছেন। এতে আমরা আমাদের পাওনা নিয়ে শংকায় পড়েছি।
অনেক পাওনাদার কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান ছাবের আহমদের মাধ্যমে পাওনা আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্বীকার করে তিনি জানান, বিভিন্ন মানুষের টাকা-পয়সা নিয়ে ব্যবসায়ী আনোয়ার লাপাত্তা হয়ে গেছেন।
দাদন ও কমিশন হিসেবে এসব টাকা নিয়েছেন। ট্রলার দুটিও তার বড় ভাই সামশুল ইসলাম বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তা নিয়ে চলছে টানাটানি।
আনোয়ারুল ইসলামের ভাই সামশুল ইসলাম জানান, তার ভাই আনোয়ার বর্তমানে দুবাই রয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় পাওনা টাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না। পাওনাদারদের চাপাচাপিতে তার (আনোয়ারুল ইসলাম) ট্রলার ছাড়াও স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী থানার ওসি মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ফিশিং ট্রলার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। কমপক্ষে ১৪০ জন লোক তার কাছে টাকা পাওনা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে পাওনাদারদের নিয়ে বৈঠক করে সমঝোতা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.