বিধির তোয়াক্কা না করেই চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া

জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এ ঘটনায় ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি সংস্থার ট্রেডলাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার পদে সংযুক্ত এক কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে স্বপদে বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বঞ্চিত শংকায় লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজার, ওয়ার্ড সচিব, হিসাব সহকারী, কমিউনিটি সেন্টার তত্ত্বাবধায়ক পদোন্নতির যোগ্য অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একজোট হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ডিএসসিসি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে তারাও উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেবেন বলে জানা গেছে।
গত ২১ অক্টোবর দুটি জাতীয় পত্রিকায় ডিএসসিসি ১০৯ জন লোকবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গত ৫ নভেম্বর আবেদন জমা দেয়ার শেষদিন ছিল। বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ীয়াস্থ নগর ভবনে ডিএসসিসি নিয়োগ কমিটি এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করেছে। আবেদনপ্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ও সংস্থার সচিব খান মো. রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, নতুন নিয়োগবিধি চূড়ান্ত না হওয়ায় অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। সেখানে ওই সব পদে সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। নতুন কাঠামোয় পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু নতুন জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি-তো এখনও কার্যকর হয়নি।
বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন জনবল কাঠামোর পদ অনুসরণ করা হচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) বিলুপ্ত করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি সিটি কর্পোরেশন গঠন করে সরকার। তিন বছর অতিবাহিত হলেও নতুন জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি পাস হয়নি। কয়েক দফা ঘষামাজার পর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোর আলোকে ১৯৮৯ সালের নিয়োগবিধিও অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি সরকার চূড়ান্ত করতে না পারলেও রুটিন কার্যক্রম, উন্নয়ন কার্যক্রম, পদোন্নতি, নিয়োগ সবই চালাতে হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশনকে। এ ক্ষেত্রে দুই সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ পরিস্থিতিতে সিটি কর্পোরেশনের প্রেষণ ও স্থায়ী কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে নানা ধরনের অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ ডিএসসিসির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
পদোন্নতি বঞ্চিতের শংকায় ভুগছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসসিসি নিয়োগ কমিটির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়োগ বাণিজ্য করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়োগবিধি না মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ইব্রাহীম হোসেন খানের সঙ্গে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বিষয় নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি আমি দেখছি কি করা যায়। তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন বঞ্চিত না হয় সেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.