বিবৃতিতে বান কি মুন-ইসরায়েলকে অবশ্যই নতুন বসতির চিন্তা ছাড়তে হবে

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নতুন বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তির সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই ইসরায়েলকে অবশ্যই বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিন 'নন-মেম্বার অবজারভার স্টেট' মর্যাদা পাওয়ার পরপরই গত শুক্রবার ইসরায়েল তিন হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণাকে 'গভীর উদ্বেগ ও নিরাশাজনক' হিসেবেও উল্লেখ করেছেন বান কি মুন।
এদিকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে নতুন বাড়ি নির্মাণ ঘোষণার প্রতিবাদ জানাতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স তাদের দেশে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে। ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকা গতকাল সোমবার জানায়, একই কারণে ইসরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের কথাও বিবেচনা করছে দেশ দুটি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করেন। রাশিয়াও ইসরায়েলের প্রতি পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরোধিতা সত্ত্বেও গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে 'সার্বভৌম রাষ্ট্রে'র স্বীকৃতি পায় ফিলিস্তিন। পরদিন শুক্রবার প্রতিশোধ হিসেবে পূর্ব জেরুজালেম থেকে পশ্চিম তীরের মালেহ আদুমিম পর্যন্ত এলাকায় তিন হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে পশ্চিম তীর উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা নিয়ে টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে না। নতুন বাড়ি নির্মাণ ছাড়াও ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দ করের অর্থ পরিশোধ না করারও ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করেছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন।
গত রবিবার এক বিবৃতিতে বান কি মুন বলেন, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের অন্যান্য স্থানে তিন হাজার নতুন বাড়ি তৈরির ইসরায়েলি পরিকল্পনা গভীর উদ্বেগ ও নিরাশা তৈরি করেছে। 'ই-ওয়ান' নামের এ পরিকল্পনার কারণে পশ্চিম তীর থেকে পূর্ব জেরুজালেম পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বসতি নির্মাণ অবৈধ। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ওপর ই-ওয়ান পরিকল্পনার মারাত্মক প্রভাব পড়বে। উভয় পক্ষকেই সমন্বিত, ন্যায়সংগত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে আলোচনায় যুক্ত হওয়ার এবং উসকানিমূলক তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। গতকাল অন্য এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন বসতির ব্যাপারে আলোচনার জন্যই ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছে। বসতি নির্মাণের ঘোষণা ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের ইসরায়েলি অঙ্গীকারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলেও মনে করছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'ইসরায়েল সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে তারা তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারে।' সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.