সরকারের আমন চাল ক্রয় -কৃষক বাঁচবে তো

রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় বর্তমান আমন মৌসুমে তিন লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ চাল সংগ্রহ শুরু হবে চলতি সপ্তাহে এবং তা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে প্রতি কেজি আমন চালের উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ টাকা ৭৬ পয়সা, যা সরকার কিনবে ২৬ টাকা দরে। জানানো হয়েছে, সরকারি খাদ্য গুদামে বর্তমানে আড়াই লাখ টন গম ও ১২ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে। দেশে সরকারি গুদামের মোট ধারণ ক্ষমতা ১৭ লাখ টন হওয়ায় সরকার এর বেশি আপাতত কিনতে পারবে না। বলা হয়েছে, সরকার সাধারণত আমন চাল ক্রয় করে না। কিন্তু দুটি কারণে এ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। একটি হলো কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া, আর অন্যটি হলো সংকট মোচনে ভবিষ্যৎ মজুদ রাখা।
দেশে এক কোটি টনের বেশি আমন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে মাত্র তিন লাখ টন চাল ক্রয় করলে আমন চালের বাজার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে কৃষককে প্রণোদনা কতটা দেওয়া সম্ভব হবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবু সরকারের এ উদ্যোগকে মন্দের ভালো বলা যায়। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ সংকট মোচনে সরকারের এ চাল ক্রয়ের পাশাপাশি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ হচ্ছে অধিক গুদামের ব্যবস্থা করা। বিগত দুই বছর সরকার বাইরে থেকে কোনো চাল আমদানি করেনি। একদিকে ধানের উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোক্তাও দ্রুত বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ না করতে পারে তাহলে অচিরেই সমস্যায় পড়তে হবে। অন্যদিকে দেশের প্রধান খাবার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আরো একটি মৌলিক সমস্যার কথা মাথায় রাখতে হবে। যাঁরা এই চাল সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট থাকেন বা থাকবেন, তাঁদের স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এ ক্রয়ে একদিকে কৃষক ঠকবে, অন্যদিকে সরকার ঠকবে, যার পরিণতিতে ফড়িয়া সম্প্রদায় ও অসৎ ব্যক্তিরা তাদের পকেট ভারী করবে। অর্থাৎ সরকারকে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছতেই হবে। কারণ আমন চালের যে মূল্য নির্ধারণ হয়েছে, সেখানে কৃষকের পরিবহন খরচ কিভাবে ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। কৃষককে বাঁচাতে এবং ক্রয় আরো সুসংহত করতে সরকারের ঋণ, আগাম ক্রয়ের জন্য প্রকল্প রাখতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা, সরকারকে ক্রয় ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.