মনের আলোয় বিশ্বকাপ

শামিলা সূর্য, ফুটবল-ভক্ত একটা মেয়ে। অথচ মাঠে বসে যে বিশ্বকাপের লড়াই দেখবে সেই ক্ষমতাটুকু নেই! না, হাঁটাচলার মতো যথেষ্ট শক্তি আছে তাঁর, নেই চোখে যথেষ্ট আলো! কিন্তু এবার তাঁর চোখে না হলেও মনে ঠিকই পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের আলো। মাঠে বসেই সে উপভোগ করেছে ফুটবলারদের লড়াই। অনুভব করেছে টানটান উত্তেজনা। এবারের বিশ্বকাপ তাই সারা জীবন মনে রাখবে আংশিকভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই মেয়েটি। শুধু তা-ই নয়, তার মতো আরও একশ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরও মনের আকাশে জ্বলজ্বল করবে এবারের আয়োজন।
ডারবানের মোসেস মাভিদা স্টেডিয়ামে দুটি ম্যাচ উপভোগ করেছে সূর্য। জীবনের এই বিশেষ আনন্দময় অভিজ্ঞতায় যারপরনাই খুশি সে, ‘বিশ্বের এই বড় ক্রীড়া আয়োজনটি সরাসরি উপভোগ করেছি। খেলা দেখেছি আর প্রতিটাক্ষণ মনে মনে কল্পনা করেছি এর চলমানতা! আর শব্দমুখর দর্শকেরা তো এককথায় অসাধারণ!’
বিশ্বকাপ উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকান কাউন্সিল ফর দ্য ব্লাইন্ড, সুইজার অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড এবং ফিফা—এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলে এবার উদ্যোগ নিয়েছিল বিশ্বকাপের আনন্দ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। ফিফার বিশ্বকাপ ২০১০ অডিও ডেসক্রিপশন প্রজেক্ট এবার জোহানেসবার্গ, ডারবান, পোর্ট এলিজাবেথ, ব্লুমফন্টেইন এবং প্রিটোরিয়া—এই স্টেডিয়ামগুলোতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের খেলা উপভোগ করার ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে নিঃসন্দেহে। আর স্থানীয় রেডিও ব্যক্তিত্বরাও সমান প্রশংসার দাবিদার। বিশেষ বর্ণনামূলক বিবরণের মাধ্যমে তাঁরা মাঠের ধারাবিবরণী তুলে ধরেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাছে। জীবন্ত করে তুলেছেন সবকিছু। ডারবানের প্রকল্পটির সমন্বয়কারী ভিজেন রাগবির বলেন, ‘ধারাভাষ্যকারেরা মাঠেই ছিলেন এবং তাঁদের ধারাবিবরণীও ছিল একদম আলাদা। ফুটবলার কী রঙের জার্সি পরেছেন, মাঠে বলের অবস্থান কোথায় কিংবা স্টেডিয়াম ও মাঠের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরেছেন তাঁরা।’
সাউথ আফ্রিকান কাউন্সিল ফর দ্য ব্লাইন্ডের যোগাযোগ কর্মকর্তা ফন জিলও খুশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করতে পেরে, ‘এই প্রকল্প প্রমাণ করেছে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও অন্য প্রতিবন্ধীদের মতো মাঠে বসে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারে। ভবিষ্যতে অন্যান্য সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও এই সেবা দিতে চাই আমরা।’
তবে এ ব্যবস্থা এবারই প্রথম নয়। ২০০৬-এ জার্মানিতেও ফিফা এ ব্যবস্থা করেছিল। ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটারের বিশ্বাস, এই সেবা দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাধুলায় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে, ‘ফুটবল বিশ্বজনীন খেলা। এবং এটা সবার কাছেই পৌঁছে দিতে হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই সেবা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

No comments

Powered by Blogger.