গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় দুই ঘণ্টা পড়েছিল মনসুর by শরিফ রুবেল
মানবজমিন-এর কাছে এমনভাবেই ছোটভাই হত্যার স্মৃতিচারণ করছিলেন নিহত মনসুর মিয়ার বড়ভাই আয়নাল হক। আয়নাল হক মানবজমিনকে বলেন, মনসুরের একটি ১০ বছরের ছেলে আছে। নাম রিমন। ও এখনো বুঝতে পারেনি যে, কী হারিয়েছে। তবে যেদিন মনসুর দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, সেদিন থেকেই রিমন আমার ছেলে। আমি ওর বাবা। বাকি জীবনে ওরে বাবা হারানোর দুঃখ বুঝতে দিবো না ইনশাআল্লাহ্।
১৯শে জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মোহাম্মদপুর। আল্লাহ্ করিম বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা ব্রিজ পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও এসবি’র সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশ, র্যাব সেদিন নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আগ্নয়াস্ত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ওই এলাকায় র্যাব’র হেলিকপ্টার থেকে অতর্কিত গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওইদিন মোহাম্মদপুর এলাকায় দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে অন্তত ১১ জন মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত মনসুরের পরিবারের অভিযোগ, সেদিন র্যাব’র গুলিতেই মারা যায় মনসুর। র্যাব তাদের কার্যালয় থেকে বের হয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে লোকজনকে ধাওয়া দেয়। ব্রিজের ঢালের আশপাশের অলি-গলিতে র্যাব নির্বিচারে গুলি ছুড়েছে। ওই গুলিতেই আমার ভাই মাটিতে পড়ে যান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ই হামাগুড়ি দিয়ে কাঠপট্টি ব্রিজের নিচ পর্যন্ত যায়। পরে ওখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আর আগাতে পারেনি। মনসুর বাসার দিকে যেতে চেয়েছিল। সেদিন গুলিতে অনেকে হতাহত হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন বলে শুনেছি। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। আশপাশের বিল্ডিংয়ের ছাদেও গুলি ছোড়া হয়েছিল। ১৯শে জুলাই ভয়ঙ্কর একদিন দেখেছে বছিলাবাসী।
পারিবারিক সূত্র বলছে, নিহত মো. মনসুর মিয়া একজন তেলের পাম্পকর্মী ছিল। বয়স ৪২ বছর। এক সন্তানের পিতা। ছেলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি মোহাম্মদপুরের বছিলা উত্তরপাড় মোল্লা মার্কেট এলাকায়। গত ১৯শে জুলাই বছিলা র্যাব-২, সদরদপ্তরের পাশে বছিলা ব্রিজের ঢালে কাঁচাবাজার গলিতে গুলিবিদ্ধ হন মনসুর। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে গভীর রাতে মনসুরের লাশ রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
No comments