জাকিরের ঘুষের হাট by পিয়াস সরকার

এলাকার নেতা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষার দায়িত্বে। ২০২০ সালের কথা, টাইম স্কেল উন্নীত করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন কুড়িগ্রাম জেলাসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। এভাবেই বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, অবসরে যাওয়ার আগে পেন্ডিং টাইমস্কেল পাওয়ার আশা করছিলাম। যদিও এটা আমার অধিকার কিন্তু মিলছিল আর কই। এরপর প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন সহযোগী কল্লোলের কাছে শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে সবাই মিলে প্রায় তিন লাখ টাকা দেই। কিন্তু মন্ত্রীর দায়িত্ব চলে যাবার পর কোনো লাভ হয়নি। মন্ত্রীর বাড়িতে টাকা চাওয়ায় পেটানোর খবর শোনার পর টাকা চাওয়ার সাহসটাও করেনি কেউ। শেরপুর জেলার এক শিক্ষক নেতা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন তো ২০১৪ সাল থেকেই চলছে। নতুন প্রতিমন্ত্রী আসার পর আমরা যোগাযোগ করি। জাকির হোসেন শুধুমাত্র দাবি উত্থাপনের জন্য আমাদের কাছে টাকা দাবি করে বসেন। এরপর আমরা প্রতিটি স্কুল থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা তুলি। যেটা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হয়। আমরা এই টাকা তুলে প্রতিমন্ত্রীর হাতে দেই শুধুমাত্র সংসদে ও সংশ্লিষ্ট মহলে আমাদের দাবি তুলে ধরার জন্য।

অনেকটা অপ্রত্যাশীতভাবেই ২০১৮ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান জাকির হোসেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে যেন আলাদীনের চেরাগে ঘষা লাগে হাত। হয়ে ওঠেন দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত। গড়েছেন অর্থসম্পদের হাজার কোটি টাকার পাহাড়। এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে মিন্টো রোডের বাড়িতে গেলেই কাজ হয়ে যেত। আর শিক্ষার দায়িত্ব পালন করলেও এতটাই অজ্ঞ ছিলেন যে সচিব ছাড়া কোনো কথা কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। দায়িত্ব হারানোর পর ঘুষের টাকা চাইতে গেলে নিজে হাতে পিটিয়েছেন। জানাজানি হবার পর ঘুষের টাকা ফেরতও দিয়েছেন। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দুর্বৃত্তরা হামলা করে জাকির হোসেনের বাড়িতে। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্বজনরা দাবি করেন শুধু বাড়ি থেকেই খোঁয়া গেছে নগদ ২৫ কোটি টাকা ও কয়েকশ’ ভরি স্বর্ণ।

২০১৫ সাল থেকে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাকির হোসেন ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেইসঙ্গে পান গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এটিই ছিল অত্র এলাকার প্রথম মন্ত্রী।

২০১৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই গড়েন সিন্ডিকেট। তার দায়িত্বকালে অনলাইনের বাইরে বদলি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। এরজন্য ২০২০ সালের পূর্বের কোনো তারিখ দেখিয়ে আদেশ জারি করতেন। একেকটি বদলির জন্য তিনি নিতেন ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। রাজধানী বা বড় শহরে বদলির জন্য ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিতেন তিনি। এমনকি এসব বদলি কার্যক্রমের আপডেট অনলাইনে দেবার নিয়ম থাকলেও মানতেন না তা। সাজিদুল হাকিম নামে এক শিক্ষক বলেন, আমি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থেকে পীরগঞ্জ জেলায় যাবার জন্য আবেদন করি। অনলাইনে ফাঁকা দেখালেও পরে জানতে পারি ইতিমধ্যে এই স্থানে অন্য আরেকজন শিক্ষক যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে শিমুল নামে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি জানান এটা প্রতিমন্ত্রী নিজে করে দেবেন এজন্য ৩ লাখ টাকা লাগবে।
তিনি জানান, এই শিমুল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এর বেশি কোনো তথ্য বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি তিনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তৎকালীন সচিব ফরিদ আহাম্মদ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এসব বদলির আদেশ সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে।

এর বাইরে জাকির হোসেনের ছিল সরকারি চাকরিতে সুপারিশ ও ডিও লেটার পাঠানোর বাণিজ্য। তিনি এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে ও চাকরির জন্য সুপারিশ করতেন। অনেকেরই চাকরি হতো। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে নমিনেশন না পাওয়ার পর বিক্ষোভ করেন ৪৮ জন চাকরিপ্রত্যাশী। তারা জানান তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেবার জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এই অর্থ ফেরত চাওয়ায় জাকির হোসেন সরকারি বাসভবনে নির্মম মারধরের শিকার হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ তিন ব্যক্তি। এ ঘটনার পর উল্টো থানায় লিখিতভাবে প্রতিমন্ত্রীর বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। হামলার শিকার একজন আবু সুফিয়ান বিশ্বাস বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও খুলনা জেলা শাখার আহ্বায়ক। তিনি বলেন, অগ্রিম টাকা দেয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে দেখা করি। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তাদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত মেলেনি। এরপর আমরা ৪৮ জনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। এরপর ৭ই ডিসেম্বর ২০২৩ সালে তার মিন্টো রোডের বাসায় ডাকেন।

তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী কল্লোলের কক্ষে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে আসেন জাকির হোসেন। এ সময় কর্মচারী ও বাসার নিরাপত্তায় থাকা সাত-আটজন ওই কক্ষে প্রবেশ করে দরজা আটকে তিনজনকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা নাছির ও জাহিদ প্রধান ফটক দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। আমি পাশের দেয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ে ঢুকে পড়ি।

তিনি এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে এরপর অফিস সহায়ক মো. মমিনকে দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। এরপর এই ঘটনা জানাজানি হলে ঘুষের টাকা ফেরতও দেন তিনি। ঘুষের টাকা ফেরত দেবার মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ মেলার পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়রাও নিয়োগের জন্য টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার এক আত্মীয় ছিলেন নাম লিটন। উনি নিয়োগের কথা বলে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। রংপুর জেলার ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এক নেতার আত্মীয় আবু সায়েম। তিনি বলেন, আমার চাচাতো ভাই ছাত্রলীগের নেতা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার বের হবার পর আমার ভাই লিটনের কাছে নিয়ে যায় কুড়িগ্রাম জেলায়। আমাদের রাত ৯টার দিকে তার বাড়িতে আসতে বলেন। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আরও চার থেকে পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন। এরপর আমাদের ডেকে নেয়া হয় তার ব্যক্তিগত কক্ষে। যাবার সময় ফোন বাইরে রেখে যেতে হয়। তিনি বলেন, সবার কাছে ৬ লাখ করে টাকা নিচ্ছি। তোমার ভাইয়ের জন্য ১ লাখ টাকা ছাড় দিলাম। এখন ১ লাখ। পরীক্ষার আগে ১ লাখ আর চাকরি হবার পর বাকি ৩ লাখ দিতে হবে। আমি তার কথামতো ২ লাখ টাকা দেই।

শুধু তাই নয়, জাকির হোসেনকে ভাগ দিয়েই কাজ করতে হতো ঠিকাদারদের। তারা অভিযোগ করেন এসব কাজের জন্য কাজের ধরন ও পরিমাণভেদে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ভাগ দিতে হতো। আর যেকোনো কাজের জন্য তার ভাগ ছিল ৫ শতাংশ। আবার শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে খুশি করে বেশ কয়েকটি কাজ কাগজে কলমে দেখিয়েও বাগিয়ে নিতেন টাকা।
বেশ কয়েকবার কয়েকটি বিষয়ে ভাইরালও হয়েছিলেন জাকির হোসেন। ২০১৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষক সমাবেশে রাজীবপুরে সোনার নৌকা উপহার নেন। এই নৌকা দিতে প্রধান শিক্ষকদের দিতে হয় ১ হাজার ও সহকারী শিক্ষকদের ৫০০ টাকা করে। আবার তার পুত্র সাফায়াত বিন জাকিরের (সৌরভ) বৌভাতের দাওয়াত পালনের জন্য রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এবারও শিক্ষকদের উপহার দিতে ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। শিক্ষকদের প্রায় ৬ লাখ টাকা চাঁদায় বর-বধূকে উপহার দেয়া হয়। কুড়িগ্রাম জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পিটিআই) থাকার পরও নিজ উপজেলা রৌমারীতে আরেকটি পিটিআই করতে উদ্যোগ নেন। যেখানে জমি দেন তার আত্মীয়স্বজনরা। চার একর জমির উপর হওয়া এই প্রকল্পের মূল্য ধরা হয় ৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এই প্রকল্প নিজ উপজেলায় হওয়ায় সকল কার্যক্রম নিজে দেখাশোনা করতেন। তৎকালীন সময়ে ঠিকাদাররা বলেছিলেন এই প্রকল্পের মূল্য ২৫ থেকে ২৮ কোটি টাকার বেশি হবার কথা নয়।

মানবজমিন কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী প্রতিনিধি জানান, জাকির হোসেন রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী এলাকায় অবৈধ বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, হাটবাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, থানায় মামলা নিয়ন্ত্রণ এবং সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন। নামে- বেনামে তার ঢাকায় একাধিক বাড়ি, রংপুরে বাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলা শহরে বহুতল বাড়ি, রৌমারীতে দুটি বাড়ি এবং রাজিবপুর উপজেলায়ও রয়েছে একটি বাড়ি। চারটি মার্কেট, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে ৫টি স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। মিল, চাতাল, খামারবাড়ি-সবই আছে তার। যার মূল্য কয়েক শ কোটি টাকা।
এখানেই শেষ নয়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব বরাদ্দে মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটকে কমিশন না দিলে মেলে না সুবিধা। ভিজিডি, ভিজিএফ, সরকারের ঘর বরাদ্দ, টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ সব কর্মসূচির বখরা যায় নেতাদের পকেটে।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগের সরকারের আগের মেয়াদে মন্ত্রীর এবং পরিবারের নামে ও বেনামে গড়ে উঠেছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। মন্ত্রীর বাড়ি রৌমারীর মণ্ডলপাড়া রূপ নিয়েছে মন্ত্রীপাড়ায়। তার আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের অন্তত ১১ জনের বহুতল বাড়ি রয়েছে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ও তার আশীর্বাদপুষ্টরা অনেক ভূমি ও সম্পদ দখলের ঘটনায় জড়িয়েছেন। রৌমারী সদর ইউনিয়নের তুরা রোডে সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৭০ শতাংশসহ ব্যক্তিমালিকানার কিছু জমি অবৈধভাবে দখল করে ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে এই দখলের কয়েক মাস পর রাতের আঁধারে সেই সাইনবোর্ড উধাও হয়ে যায়।

এলাকাবাসী আরও জানান, দায়িত্বে থাকাবস্থায় সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের নামে রৌমারীর চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ নামক স্থানে প্রায় আড়াই একর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেই জায়গা দখল করে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্টের প্রায় ২ কোটি টাকার জায়গা এখন মন্ত্রীর দখলে। একইভাবে তুরা রোডের গুচ্ছগ্রামে ১৫ শতাংশ, পাশে ২১ শতাংশ ও অপর একস্থানে ৫০ শতাংশসহ প্রায় ২ একর জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

সদর ইউনিয়নের জন্তিরকান্দা নামক স্থানে সরকারি এক একর জায়গা দখল করে প্রতিমন্ত্রী ‘শিরি অটোরাইস মিল’ নামে শিল্পকারখানা নির্মাণ করেন। এ জমির মূল্য ৩ কোটি টাকা। কর্তিমারী বাজারের সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন ১নং খাস খতিয়ানের ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ শতক জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট। রাজিবপুর উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম সংলগ্ন ২ কোটি টাকার সরকারি পুকুরের ২০ শতাংশ জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানঘর।

এ ছাড়াও বন্দবেড় ইউনিয়নের কুটিরচরে এক একর, দইখাওয়া এলাকায় ৫ একর, উপজেলার দাঁতভাঙ্গা বাজার এলাকায় ১ একর সরকারি জায়গা দখল এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভরাট করে ‘আরব আলী বাবার মাজার’ নির্মাণ করেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ইছাকুড়ি মহিলা মাদ্রাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ জায়গা দখল করে মন্ত্রী গড়ে তোলেন ‘জাকির হোসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার, মাটিভরাটসহ বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ৩০ শতাংশ হারে ভাগ নিতেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সবমিলে গত ৫ বছরে জাকির হোসেন অবৈধ ভূমি দখলসহ কামিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা।

তার বিরুদ্ধে রয়েছে পুরো এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ। এ ছাড়াও ২০২০ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রতিমন্ত্রীর পারিবারিক মাইক্রোবাসে ইয়াবা নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াবাসহ গাড়িচালক রফিকুল ইসলামকে আটক করে র‌্যাব-১৪’র একটি দল। জাকির হোসেনের সঙ্গী সেকেন্দার বাবলুও গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সকারের পতনের পর উত্তেজিত জনতা কর্তৃক ভাঙচুরের ঘটনায় রৌমারী জাকির হোসেনের বাড়িতে বিপুল অর্থ ও ত্রাণ উদ্ধার হয়। বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ কোটি নগদ টাকা ও কয়েক’শ ভরি স্বর্ণের গহনা লুট হওয়ার খবর জানিয়েছে মন্ত্রীর স্বজনরা। এ ছাড়াও আসবাবপত্র, ডজনখানেক টিভি-ফ্রিজ, ৮টি মোটরসাইকেল, ৩টি ট্রাক, ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১টি ল্যান্ডক্রুজার জেটএক্স গাড়ি ও ১টি মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে মেলে সরকারি ত্রাণের কম্বল, ত্রাণের কয়েক’শ বান্ডেল ঢেউটিন, করোনার স্যানিটাইজার সামগ্রী ফুটবলসহ খেলার উপকরণ ও মাস্ক।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ও তার সহযোগী কল্লোলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৪১ জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার মধ্যে রয়েছে জাকির হোসেনের নাম।

No comments

Powered by Blogger.