রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ চান ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা মনে করি তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই সরকারের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে, জনগণের আস্থা রয়েছে, সকলেরই আস্থা আছে। কিন্তু অবশ্যই সেটা সীমিত সময়ের মধ্যেই করতে হবে, একটা সময়ের মধ্যে করতে হবে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যাহত হবে। আমি আবার রিপিট করতে চাই যে, অবশ্যই অতি দ্রুত জনগণের যে চাহিদা, সেই চাহিদাকে পূরণ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে একটা নির্বাচন দ্রুত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়- সেজন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। এই যে সংস্কারের বিষয়টা এসেছে, সব সময় আসছে- সেই সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটা কীভাবে আসবে? সেটা আসবে একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মধ্যদিয়ে, তাদের মাধ্যমে সেটা আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিলেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে তাদের মাধ্যমে সেই সংস্কার আসতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এখন যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাজ করছেন, তারা সবাই আন্তরিক, যোগ্য মানুষ। কিন্তু আমরা এটাকে আরও দৃশ্যমান দেখতে চাই। আমরা দেখতে চাই যে, প্রধান উপদেষ্টা তিনি অতি দ্রুত জনগণের সামনে তিনি কি করতে চান তা উপস্থাপন করবেন। একটা রোডম্যাপ দেবেন যে, কীভাবে তিনি অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, কীভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ঘটিয়ে তারা জনগণকে স্বস্তি দিয়ে সামনের দিকে এগুবেন নির্বাচন করার জন্য।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত এই সরকারের সত্যিকার অর্থে কোনো এজেন্ডা ভিত্তিক কোনো আলোচনা হয়নি। রাজনীতি ছাড়া তো এটা হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত তো নিতে হবে। রাজনীতি এই জায়গাটাই রাজনীতি, যে জায়গায় তারা বসে আছেন ইন্টারিয়াম গভর্মেন্টের এটাই হচ্ছে রাজনীতির জায়গা। কারণ এখান থেকে তো দেশের সবকিছু অফিসিয়ালি চালিত হবে। সুতরাং যারা রাজনীতি করছেন তাদের সঙ্গে অবশ্যই মতবিনিময় করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র নেতৃবৃন্দ যারা আজকে সহযোগিতা করছেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এই বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে এই বিপ্লবকে যেন সুসংহত করা যায়, প্রতিবিপ্লব যেন না ঘটে। ইতিমধ্যে যে চক্রান্তের কথাবার্তা উঠে আসছে আমাদের মধ্যে সেগুলোকে যেন প্রতিহত করা যায়, সেইগুলোতে পরাজিত করে বিপ্লবের চেতনাকে যেন আমরা সমুন্নত রেখে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেই বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দেখতে চাই না যে সমস্ত ব্যক্তিরা হাসিনার পাশে থেকে, তার সঙ্গে থেকে, তার দোসর হয়ে মানুষের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, লুটপাট করেছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তাদেরকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আশপাশে দেখতে চাই না। পত্রিকায় যখন ছবি দেখি যে, এই সমস্ত লোকেরা আবার সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই। আমরা খুব চিন্তিত হই যে, আজকে ১৬/১৭ দিন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যে সমস্ত সেক্রেটারিরা ওই সরকারকে এতদিন ধরে চালিয়েছে, তাদের সমস্ত কুবুদ্ধিগুলো দিয়েছে, তারা এখনো এই সরকারের সচিবের দায়িত্ব পালন করছে- এটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই যে, অবিলম্বে যারা জনগণের সঙ্গে সস্পৃক্ত আছেন, সেই আইন মেনে তাদেরকে এই সরকারের পাশে দেখতে চাই। একথাগুলো আমরা বলতাম না। বলতে বাধ্য হচ্ছি এজন্য যে, আমরা সেগুলো দেখতে পারছি না।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়নি। অথচ আগের ভাইস চ্যান্সেলরগুলো রিজাইন করেছেন। আমরা দেখতে চাই যে, ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে যাদের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমরা দেখতে চাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সচেতন। এ ব্যাপারে তাদেরকে সর্বাত্মক সহেযোগিতা দিয়েছি, দেবো।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএনপি’র জহির উদ্দিন স্বপন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
No comments