আসলে তো বোলারদের লড়াই

হাউজ দ্যাট! ফুটবল মাঠে রেফারির কাছে ক্রিকেটীয় ভঙ্গিতে আবেদন করতে দেখেছেন কখনো? অদ্ভুত সেই দৃশ্য দেখা গেল কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। দুই পাশে দুটি মিনি গোলপোস্ট বানিয়ে দুই ভাগে ভাগ হয়ে নেমে পড়লেন স্যামি-সারওয়ানরা। আন্দ্রে রাসেল বল নিয়ে বিপজ্জনক ভঙ্গিতে ঢুকছিলেন। একরকম ল্যাং মেরেই তাঁকে ফেলে দিলেন কাইরন পোলার্ড। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আপত্তি জানিয়ে রেফারির দিকে তাকালেন রাসেলের সতীর্থরা। চিৎকার করে উঠলেন—হাউজ দ্যাট!
পুরো ব্যাপারটায় সবচেয়ে বেশি মজা পাচ্ছিলেন রেফারিই। আদুল গায়ে, মুখে একটা বাঁশি নিয়ে সেই মিনি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার কাজটা করছিলেন কেমার রোচ। কালকের অনুশীলনে সবচেয়ে খোশমেজাজে পাওয়া গেল এই ফাস্ট বোলারকেই। তা তো যাবেই। ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছেন। একটা হ্যাটট্রিকও আছে। উইকেটপ্রতি রান খরচ হয়েছে মাত্র ১২।
শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে নিশ্চয়ই ম্যাচের আগে দেখা হয়েছে রোচের। চাইলে রোচ এই ঠাট্টা করতেই পারতেন, ‘তোমাকে নির্ভার রাখতেই তো গত ম্যাচটা খেললাম না। না হলে আমার উইকেটও তো হয়ে যেতে পারত ১৮টি!’ আফ্রিদিও পাল্টা জবাবে বলতে পারতেন, ‘অসুবিধা কী, এই ম্যাচে তো মুখোমুখি লড়াই হয়েই যাচ্ছে। দেখা যাক, তুমি কী করো, আমি কী করি।’
আফ্রিদি-রোচের এই ‘মুখোমুখি লড়াই’ থেকে একটা বার্তাও খুঁজে নিতে পারেন। বিশ্বকাপের শেষ আটের এই দুটি দলের লড়াই মূলত তাদের বোলিং আক্রমণেরই লড়াই। পাকিস্তানকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও তা-ই। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ২৫ জনের তালিকা দেখুন। সেখানে এই দুই দল মিলিয়েই একজনকে পাবেন। ডেভন স্মিথ। ৬ ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ২৯৩। পাকিস্তানের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ২১১ রান নিয়ে তালিকার ২৭ নম্বরে উমর আকমল।
এবার সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের, না ২৫ জনের তালিকা করতে হবে না, ১০ জনের তালিকা দেখুন। সেখানে পাকিস্তানের দুজন, ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও তা-ই। সব মিলে এই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পর্যন্ত বোলাররা উইকেট (রানআউট বাদ দিয়ে) নিয়েছেন ৫৮৩টি। পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররাই নিয়েছেন ১০০টি উইকেট। সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া চার দলের দুটোই পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৬০ উইকেট তুলে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষে। ভারতের উইকেট ৫৪টি। ৫৩টি করে উইকেট পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
বোলারদের দাপটের সবচেয়ে বড় মাপকাঠি যদি হয় প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়া, সেখানে সর্বাগ্রে তো অবশ্যই ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশকে ৫৮-র লজ্জা তো রোচ-স্যামি-বেনরাই দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন পাঁচটি ইনিংসের তিনটিই এই দুই দলের বিপক্ষে।
পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ছয় ম্যাচে সেই অর্থে জ্বলে উঠেছেন প্রথম দুই ম্যাচে। এর পর থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তান তো ১৯২ রানে অলআউট হয়ে গেল। এর চেয়েও বড় লজ্জায় তারা পড়েছিল পুঁচকে কানাডার বিপক্ষে। যে ম্যাচে পাকিস্তান ১৮৪ রানে অলআউট হয়ে পরাজয়ের শঙ্কাতেই কাঁপছিল। একপর্যায়ে কানাডার স্কোর ছিল ১০৪/৩! সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন আফ্রিদি। পাকিস্তান অধিনায়ক আসলে প্রথম তিন ম্যাচেই ভালো করেছেন। তাঁর ১৭ উইকেটের ১৪টিই প্রথম তিন ম্যাচে। শেষ তিনটি ম্যাচ আবার উমর গুলের। তাঁর ১৩ উইকেটের ৯টিই এ সময়ে।
আজ হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তান একে অন্যের প্রতিপক্ষ। তবে আক্ষরিক অর্থেই ‘বল’-এর জায়গাটিতে তারা এক মঞ্চে। যে মঞ্চের নায়ক বোলাররাই।

No comments

Powered by Blogger.